Thursday, December 20, 2018

আমেরিকার জন জে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাঙালি কবির বই

ইউরোপের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাস্ট ফিকশন থেকে প্রকাশিত "পোয়েমস অব কাজী জহিরুল ইসলাম " বইটি যুক্তরাষ্ট্রের জন জে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যা বাংলা কবিতার জন্য এক বিরল সম্মানের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
বিশ্ব র‍্যাংকিং তালিকায় জন জে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বেশ উপরের দিকে। ক্রিমিন্যাল সাইকোলজি বিষয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। গ্রন্থটির সম্পাদক অধ্যাপক রাজীব ভৌমিক জানান, এই মানের কোনো মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম কোনো বাঙালি কবির কবিতা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হলো।   
"পোয়েমস অব কাজী জহিরুল ইসলাম" গ্রন্থে নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী বাঙালি কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ১০৪টি ইংরেজি কবিতা রয়েছে। কবি নিজে সরাসরি ইংরেজিতে লিখেছেন ৩২টি কবিতা, বাকিগুলো বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত। অনুবাদ করেছেন সিদ্দীক মাহমুদ, লুবনা ইয়াসমীন এবং ড. রাজীব ভৌমিক। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। 
কাজী জহিরুল ইসলাম বাংলা ভাষার একজন শক্তিমান কবি। ১৮টি কাব্যগ্রন্থসহ তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৪৯টি। ২০১৯ এর বইমেলার আরো ৬টি নতুন বই আসছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে বাঙালি কবিদের ইংরেজি কবিতার সংকলন "আন্ডার দি ব্লু রুফ"। এর দুটি ভলিউম আমাজনে পাওয়া যাচ্ছে যা বাঙালি এবং বিদেশি কাব্যানুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

Wednesday, December 12, 2018

আল্লামা ইকবাল : বিশ্বকবিতার বরপুত্র


আম্মার সাদিক : পাঞ্জাবের সিয়ালকোট শহরে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর ইকবালের জন্ম। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মীরী ব্রাহ্মণ। প্রায় তিনশ বছর আগে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন। সিয়ালকোটে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন শেষে ইকবাল ১৮৯৫ সালে লাহােরে যান।
শৈশব থেকেই ইকবাল কবিতা লেখা শুরু করেন। তার শিক্ষক শামসুল উলামা মীর হাসান তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাকে উৎসাহিত করতে থাকেন। সিয়ালকোট ত্যাগ করার সময় ইকবাল যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম পরীক্ষায় মাত্র উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তবু প্রাচ্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানে ততক্ষণে তিনি গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন।
লাহােরে তিনি বিভিন্ন কবি-সম্মেলনে যােগ দিয়ে কবিতা পাঠ করতে থাকেন। ক্রমে তাঁর কবিখ্যাতি দিগ্বিদিক ছড়াতে থাকে। লাহােরের আঞ্জুমানে হিমায়েতে ইসলামের বার্ষিক সভায় ১৮৯৯ এবং ১৯০০ সালে পঠিত তার ‘অনাথের বিলাপ’ ও ‘ঈদের চাঁদের প্রতি ইয়াতীমের সম্বােধন’ কবিতাদ্বয় (তাঁর প্রকাশিত কাব্য-সংগ্রহে এগুলির স্থান দেয়া হয়নি) শ্রোতাদের মনােযােগ আকর্ষণ করে।
ইকবাল মৌলিক রচনার পাশাপাশি অনেক বিদেশী কবিতার সরল কাব্যানুবাদও করেছেন। এ শ্রেণীর কিছুসংখ্যক কবিতা তার প্রকাশিত বইগুলোতে দেখা যায়। তিনি কিছু কিছু রাজনৈতিক কবিতাও লিখেছেন, যদিও এদিকে তার ঝোঁক বেশীদিন স্থায়ী হয়নি।
লাহােরে ইকবাল বিখ্যাত মনীষী টমাস আরনল্ডের সংস্পর্শে আসেন এবং পাশ্চাত্য কৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ভাবধারার সঙ্গে পরিচয় লাভের সুযােগ পান।
বিশেষত আধুনিক সমালােচনা ও গবেষণা-পদ্ধতির পাঠ তিনি আরনল্ডের কাছেই পান। এ সময় ইকবালের প্রথম বই প্রকাশিত হয়, যা উর্দু ভাষায় ধনবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম বইও বটে । তার এ সময়কার কবিতা বেশ উচ্চমার্গীয় হলেও এতে পরবর্তী রচনায় পরিলক্ষিত দৃষ্টির প্রসারতা, উদারতা, গভীরতা ও চিন্তার পরিপক্বতা দেখা যায় না।
আরনল্ডের পরামর্শে ইকবাল উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯০৫ সালে ইউরােপ যান। তিন বছর তিনি সেখানে অবস্থান করেন। তাঁর চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে প্রবাসের এই তিন বছর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে, কর্মের চেয়ে প্রস্তুতিতেই এর অধিকাংশ ব্যয় হয়েছে।
কেমব্রিজ, লণ্ডন ও বার্লিনের বিশাল গ্রন্থাগারগুলো ছিল সহজলভ্য। গভীর অধ্যয়ন ও ইউরােপীয় মনীষীদের সঙ্গে পাণ্ডিত্যপূর্ণ আলাপ-আলােচনায় ইকবাল তার প্রবাসকালের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন।
তাঁর চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় এ সময়। সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদই ইউরােপীয় সঙ্কটের মূল কারণ; তার উদার মন এমন জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে।
অপরদিকে অবিরাম সংগ্রাম ও সক্রিয় গতিশীল জীবনকেই তিনি স্বকীয় আদর্শরূপে গ্রহণ করেন। তার অসংখ্য কবিতায় এর পরিচয় পাওয়া যায়। আবার এসময়েই তিনি উর্দুর পরিবর্তে ফারসি ভাষায় কবিতা রচনা শুরু করেন।
কবি ইকবালের ইউরােপ প্রবাস ছিল গভীর প্রস্তুতির। তিনি কেমব্রিজ থেকে ডিগ্রী ও মিউনিখ থেকে ডক্টরেট লাভ করেন। ছয় মাস তিনি লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবির অধ্যাপক ছিলেন। তখন লণ্ডনে অনেকগুলি মূল্যবান বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
ইকবাল ১৯০৮ সালে লাহােরে ফিরে আসেন। কিছুদিনের জন্য আংশিক সময় তিনি লাহাের সরকারী কলেজে দর্শন ও ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনায় ব্যয় করেন। এবং সঙ্গে সঙ্গে আইন ব্যবসাও শুরু করেন। পরে অধ্যাপনা ছেড়ে আইন ব্যবসায় পূর্ণ মনােযােগ দেন।
১৯১৫ সালে ‘আসরার-ই-খুদী’ প্রকাশ ইকবালের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। গতানুগতিক নিষ্ক্রিয় মরমীবাদের ভক্তদের মনে এ সংকলন প্রবল ধাক্কা দেয়। প্রথমদিকে তাকে প্রবল বিরুদ্ধ সমালােচনা সহ্য করতে হয়েছিল।
সুখের বিষয়, ইকবালের জীবনকালেই তার এ বই বিশ্বব্যাপী সমাদর লাভে সমর্থ হয়েছিল। ‘আসরার-ই-খুদী’র পরিপূরক রুমুয-ই বেখুদি’ প্রকাশিত হয় ১৯১৮ সনে। ফলে কবি ও দার্শনিকরূপে ইকবালের খ্যাতি বিশ্বের সুধী সমাজে স্থায়ীভাবে প্রসার লাভ করে।
ইকবালের কাব্যকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় : এক. শুরু থেকে ‘রুমুয-ই-বেখুদি’ পর্যন্ত রচিত কবিতা। দুই. ‘রুমুয-ই-বেখুদি’ পরবর্তী কবিতা।
বিলাতে যাবার আগে ইকবাল উর্দু ভাষায় যেসব কবিতা লিখেছিলেন তাতে যথেষ্ট সৌন্দর্য ছিল বটে, কিন্তু তাঁর প্রতিভা তখনাে স্থৈর্য ও পূর্ণতা পায়নি। স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরে উর্দুতে ‘শিকওয়া, জওয়াব-ই-শিকওয়া’, ‘শামা আওর শাইর’ ইত্যাদি কয়েকটি অপূর্ব রকমের বই প্রকাশ করেন।
কিন্তু মানব সমাজের জন্য যে অভিনব বাণী তিনি প্রদান করবেন, তার আভাস এতে নেই। সে বাণী প্রথম মূর্ত হয়ে ওঠে ফারসী ভাষায় লিখিত ‘আসরার’ ও ‘রমূ” কাব্যদ্বয়ে, পূর্ণ বিকশিত প্রতিভার প্রথম অবদান। বিশ্ব সাহিত্যে এর সমকক্ষ কাব্য বিরল।
১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘খিজর-ই-রাহ’ এবং পরের বছর ‘তুল-ই- ইসলাম’। দুটি কবিতাই উর্দু ভাষায় রচিত এবং ‘বাঙ্গ-ই-দারা’ নামক কবিতাটি এ সংকলনে স্থান পেয়েছে।
এরপরে প্রকাশিত হয় ফারসী ভাষায় লিখিত ‘পয়ামই-মাশরিক’ বা প্রাচ্যের বাণী। এর কবিতাগুলি বিখ্যাত জার্মান কবি গ্যেটের কয়েকটি কবিতার প্রত্যুত্তরে লিখিত।
দু’বৎসর পর প্রকাশিত হয় ‘যবুর-ই- আজম’ (ফারসী) এবং তার পরে ‘জাবিদনামা’ (ফারসী)।কেউ কেউ ‘জাবিদনামা’-কে ইকবালের শ্রেষ্ঠ রচনা বলে অভিহিত করেছেন।
১৯৩৪ সালে তাঁর ফারসি কবিতা ‘মুসাফির’ এবং ১৯৩৬ সালে অন্য একটি ফারসি কবিতা ‘পাসূচে বায়াদ কদ’ (কিংকর্তব্য) প্রকাশিত হয়। এ সময় আবার তিনি উর্দু ভাষাতেও কবিতা লেখা শুরু করেন।
উর্দু কবিতা সংগ্রহ ‘বাল-ই-জিবরাঈল’ ১৯৩৫ সালে এবং ‘যুব-ই-কলীম’ ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়।
ফারসি ও উর্দু ভাষায় তাঁর শেষ কবিতা সংকলন ‘আরমুগান-ই-হিজায’ (হিজাযের অভিনব উপহার) প্রকাশিত হয় ইকবালের ইনতিকালের পরে।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ইকবালকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
তিনি মাদ্রাজ, হায়দরাবাদ ও আলীগড়ে কয়েকটি সুচিন্তিত বক্তৃতা প্রদান করেন। সেগুলি The Reconstruction of Religious Thought in Islam নামে পরে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।
১৯৩১-৩২ সালে তিনি আবার ইউরােপ ভ্রমণে গেলে বিখ্যাত ফরাসী দার্শনিক হেনরী বার্গস-র সঙ্গে প্যারিসে সাক্ষাত করেন। কথা প্রসংগে ইকবাল ‘কালকে ভৎসনা করাে না’ হাদীসের উল্লেখ করেন, শােনামাত্র পক্ষাঘাতগ্রস্ত হুইল চেয়ারে বসা দার্শনিক লাফিয়ে ওঠেন।
ফিরবার পথে ইকবাল স্পেন ভ্রমণ করেন এবং মুসলিম যুগের প্রাচীন সৌধসমূহ দর্শন করেন। একটি ইসলামি সম্মেলনে যােগদান উপলক্ষে তিনি জেরুজালেমেও গমন করেছিলেন।
১৯৩৩ খৃস্টাব্দে আফগানিস্তানের শিক্ষা সংস্কার বিশেষ করে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা সম্বন্ধে পরামর্শ দেবার জন্য আফগান সরকার ইকবালকে কাবুলে দাওয়াত করে নিয়ে যান। তার প্রদত্ত অধিকাংশ সুপারিশই আফগান সরকার কার্যে পরিণত করেছিলেন।
ইকবাল ১৯০৮ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত আইন ব্যবসা করেন। পরে অসুস্থতার জন্য তাকে এ ব্যবসা ছাড়তে হয়। তার আইনের জ্ঞান ছিল গভীর। কিন্তু অত্যধিক ধনােপার্জন কখনই তার উদ্দেশ্য ছিল না।জীবন ধারণের জন্য যতটা অর্থের দরকার, তার যােগাড় হলেই তিনি আর মােকদ্দমা নিতেন না।
আল্লমা ইকবাল ১৯২৭ সালে পাঞ্জাব আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালে তিনি সাইমন কমিশনের সমক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন। সে বছরের মুসলিম লীগের বার্ষিক সভার তিনি সভাপতিও নির্বাচিত হন। তাঁর সুচিন্তিত অভিভাষণে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির আবশ্যকতা সম্বন্ধে আভাস ছিল।
১৯৩৭ সনের ২১ জুন কায়েদ-ই-আযমকে লিখিত এক পত্রে তখনকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার কথা উল্লেখ করে ইকবাল লেখেন, এ অবস্থায় এটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে, ভারতে শান্তি রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে বংশগত, ধর্মীয় ও ভাষাগত সংযােগের ভিত্তিতে দেশকে পুনর্বন্টন করা’।
ভারতীয় সমস্যার বাস্তব সমাধান-রূপে দেশ বিভাগের পরিকল্পনা তিনিই প্রথম পেশ করেন।
১৯৩১ এবং ১৯৩২ সালে তিনি বিলাতে গােল টেবিল বৈঠকে যােগদান করেন। ১৯৩২ সালে তিনি মুসলিম সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনের সভাপতির অভিভাষণে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সুচিন্তিত মতবাদ প্রকাশ করেন।
১৯৩৫ সালে রােডস (Rhodes) বক্তা হিসেবে তাকে অক্সফোর্ডে আমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু অসুস্থতার দরুন তাকে এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করতে হয়। ১৯৩৭ সালে তার চোখে ছানি পড়ে। যদিও মাঝে মধ্যে তিনি কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেন, তবুও তার শেষ দিনগুলি দৈহিক অসুস্থতার মধ্যেই অতিবাহিত হয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাঁর সৃজনী কর্মতৎপরতা এ সময় ছিল সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। আমৃত্যু তার শেষ কবিতাটি বলে বলে লিখিয়ে নেন। যারা তার সেবা-শুশ্রুষা করতেন তাদের মত, শারীরিক শক্তি হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনীষা অধিকতর শক্তিশালী ও প্রখর হতে থাকে ।
১৯৩৮ সালের ২৫ মার্চ তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। সুচিকিৎসা ও সেবাশুশ্রুষা সত্ত্বেও তিনি ২১ এপ্রিল প্রত্যুষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আধঘন্টা আগে তিনি নিচের শ্লোকটি আবৃত্তি করেন :
نمیمے از حجاز آید که ناید + ر دانای راز آید که ناید

سرود رفته ما أید که ناید + سر أمد روزگار ابن فقیر
বিগত দিনের সুর-মূৰ্ছনা ফিরবে অথবা ফিরবে না

হিজাযের মধুমন্দ বাতাস বইবে অথবা বইবে না
দীন ফকিরের জীবনের দিন ফুরালে হায় আজ
অন্য মনীষী সুধীরা ফের  আসবে অথবা আসবে না।

অন্তিম সময়ে আল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করে তিনি ধীরে ধীরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ঠোঁটে একটি ক্ষীণ হাসির রেখা খেলছিল এবং স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল তারই একটি পংক্তি:

বীর মুমিনের নিশান তােমায় বলছি এবার,
মৃত্যু এলে হাস্য খেলে ঠোঁটেতে তার

লাহােরের ঐতিহাসিক শাহী মসজিদের প্রাঙ্গণে তার সমাধি রচিত হয়।

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি - শিল্পী: আপেল মাহমুদ



২০০৬ সালে এটি বিবিসি কর্তৃক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গান হিসেবে শ্রোতা মনোনীত ২০ সেরা গানের মধ্যে ৭ম অবস্থানে অর্ন্তভূক্ত হয়েছিল

বনভোজন – গোলাম মোস্তফা


নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে
আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।
রাঁধুনিদের শখের রাঁধার পড়ে গেছ ধুম,
বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম।
বাপ মা তাদের ঘুমিয়ে আছে এই সুবিধা পেয়ে,
বনভোজনে মিলেছে আজ দুষ্টু কটি মেয়ে।
বসে গেছে সবাই আজি বিপুল আয়োজনে,
ব্যস্ত সবাই আজকে তারা ভোজের নিমন্ত্রণে।
কেউবা বসে হলদি বাটে কেউবা রাঁধে ভাত,
কেউবা বলে দুত্তুরি ছাই পুড়েই গেল হাত।
বিনা আগুন দিয়েই তাদের হচ্ছে যদিও রাঁধা,
তবু সবার দুই চোখেতে ধোঁয়া লেগেই কাঁদা।
কোর্মা পোলাও কেউবা রাঁধে, কেউবা চাখে নুন,
অকারণে বারে বারে হেসেই বা কেউ খুন।
রান্না তাদের শেষ হল যেই, গিন্নী হল নুরু,
এক লাইনে সবাই বসে করলে খাওয়া শুরু।
ধূলোবালির কোর্মা-পোলাও আর সে কাদার পিঠে,
মিছিমিছি খেয়া সবাই, বলে- বেজায় মিঠে।
এমন সময় হঠাৎ আমি যেই পড়েছি এসে,
পালিয়ে গেল দুষ্টুরা সব খিলখিলিয়ে হেসে। 


Saturday, December 8, 2018

কবিতায় আধুনিকতা মানেই জটিলতা নয়


- সায়মন স্বপন

কবির ভাবনার জানালায় যা দেখা মেলে তা চিত্রকল্প। রূপক, উপমার পাশাপাশি চিত্রকল্পও পাঠক বা সমালোচকের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হওয়া জরুরী। কেননা, চিত্রকল্পের মাধ্যমে কবির নিজস্ব ঢং প্রকাশ পায়। কবিতার শরীরে অনাকাঙ্খিতভাবে চিত্রকল্প ঢুকে পড়লে কবিতার গঠনশৈলী বিকৃত হয়। কবিতা হয়ে ওঠে জটিল। তখন কবিতাকে আধুনিক বা উত্তর-আধুনিকতার দোহাই দিয়ে কবিতাকে তুলে ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে, কবিতাটি কেন অর্থবহ বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হলো না তা আড়াল করা হয়। আধুনিকতার চাদর জড়িয়ে কবিতার দুর্বলতা আড়াল করা মানেই ঐ কবির আগামীর পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে, অতি অপরিচিত কবির কবিতাটি বেশ মানোত্তীর্ণ, কিন্তু পরিচিত কবি বা সমালোচকের কাছে সেটি কবিতাই হয়ে ওঠেনি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। বলে রাখা জরুরি যে, প্রত্যেকটি কবিতা তার নিজস্ব আলোয় আলো ছড়িয়ে থাকে। কোনো কবির দৃষ্টিভঙ্গি বা বোধের কাছাকাছি পৌঁছানো বেশ কঠিন। সুতরাং, কোনো কবিতাকে ‘কবিতা’ হয়নি বা আধুনিক-অনাধুনিকতার দোহাই দিয়ে কবিতাকে নিচু করা আদৌ উচিত নয় বলে মনে করি। কেননা, এ বিষয়ে বিস্তর গঠনমূলক গবেষণা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক প্রসারের প্রয়োজন। 
আধুনিকতা বা উত্তর-আধুনিকতা শব্দ দুটিই মানুষের সৃষ্টি, আমরাই আমাদের প্রয়োজনে এই শব্দদ্বয়কে সাহিত্যের পিঠে চড়িয়েছি। মূলত বিংশ শতাব্দীর দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যাখ্যামূলক ভিত্তিতে বোঝানোর জন্যই এমন সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। সাথে সাথে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা তথা কবিতাকেও এই সরলরৈখিক উপপাদ্যের প্রমাণচিত্রে অহরহ অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ফলে কবিতার শরীর কাটা-ছেঁড়া করে কবিতার নিজস্ব ঢং বা গতি হারাচ্ছে। সেই সাথে ছন্দচর্চার অভাবেও হারাচ্ছে কবিতার নিজস্ব ছন্দ। জোর করে হলেও, কবিতার নিজস্ব ছন্দকে মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর অন্য ছন্দ বা ঢং প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা ব্যস্ত। উল্লেখ্য যে, শিকড়কে বিসর্জন দিয়ে গাছের মগডালে ফল আশা করা বোকামি। সুতরাং, অতি-আধুনিকতার নামে কবিতাকে দিনে দিনে অস্পষ্ট বা দুর্বোধ্য করছি কি না তা আরও ভেবে দেখা জরুরী। অ্যান্ড্রিয়াস হুইসেন উত্তর-আধুনিকতাবিষয়ক একটি আলোচনায় উল্লেখ করেছেন, ‘উত্তর-আধুনিকতার অস্পষ্ট অবয়বহীন ধারণা এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এই শব্দটির অপরিবর্তনশীল ব্যবহারে শব্দটির অস্পষ্ট অর্থ আমাদের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ একইভাবে, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ‘সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি’ গ্রন্থে ‘আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা’ বিষয়ে বলেছেন, ‘সমালোচকরা উত্তর-আধুনিকতার ব্যাখ্যায় কেউই একমত নন। এই উত্তর-আধুনিকতা একধরনের নব্যরীতিবাদ বা তার থেকেও নতুন কিছু।’
আধুনিক কবিতার নামে কবিতাকে অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন বা গন্তব্যহীন করা উচিৎ নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, আমাদের সমকালীন কবিদের হাত থেকে  যেসব কবিতা বেরিয়ে আসছে; সেসব কবিতায় আরও বেশি দর্শন, বোধ ও গঠণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসা জরুরী। সাথে প্রাঞ্জলতা এবং সহজবোধ্যতাও প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ। কারণ কবিতা হলো কবির মনন ও মেধার সংমিশ্রণ। এই সংমিশ্রণের কোনো কাল নেই। জীবনবোধ ও নাগরিক-দাবীর কথা কবিতায় উঠে আসে অবলীলায়, নির্ভয়ে। কবিতা কোনো ব্যক্তি বা দেশের একমাত্র সম্পদ নয়, বরং তা বিশ্বসকলের। কবিতার মাধ্যমে বন্ধন তৈরি হয় মানুষ ও মানবতার। কবিতায় আধুনিকতা তুলে ধরতে হলে কবিকে আত্মসচেতন হতে হবে। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান  ‘আধুনিক বাংলা কবিতা : প্রাসঙ্গিকতা ও পরিপ্রেক্ষিত’  গ্রন্থে ‘আধুনিক কবিতা : প্রাসঙ্গিকতা ও পরিপ্রেক্ষিত’  বিষয়ে কবিকে বলেছেন, ‘বর্তমানে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেন অতীত ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ। তিনি প্রগতির স্বপক্ষে, মানুষের স্বপক্ষে। তিনি মূলতঃ স্বাদেশিক কিন্তু ফলতঃ বিশ্বনাগরিক। জগৎ ও জীবন প্রসঙ্গে কবি কথা বলেছেন সব কালেই। আধুনিক কবি সেই সঙ্গে সচেতন হয়ে উঠেছেন নিজের সম্পর্কেও। বস্তুতঃ আধুনিক কবির এক প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনি আত্মসচেতন।’ সুতরাং, কবিতায় আধুনিকতা স্থান পেল কি পেল না তা পাঠক কিংবা সমালোচকেরা নির্ধারণ করবেন, কবির এ বিষয়ে মাথা ব্যথা করা জরুরী নয়। কবির কাজ হলো কবিতার নন্দনতত্ত্বকে গুরুত্ব দেওয়া। তাহলে কবিতায় দুর্বোধ্যতা বা জটিলতা প্রসঙ্গটি দূরে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, কবিতার নন্দনতত্ত্ব বা নান্দনিকতা কবির স্বকীয় বোধের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোজনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিখনের প্রয়োজন নেই বললেই চলে। প্রয়োজন, কবিতার প্রেমে কামাতুর হওয়া, ধ্যানমগ্ন হওয়া। কবিতার জন্য অপেক্ষা করা। একটি কবিতার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করা। সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। কবিতাকে পেশা নয় নেশা হিসেবে গ্রহণ করা। কবিতার নেশাকে নবায়নযোগ্য করে তোলা। কেউ কাউকে হাতে ধরে কবিতা শিখিয়ে দিতে পারে না। কবিতার হাতেখড়ি বলে কিছু নেই। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এ বিষয়ে আরও উল্লেখ করেন যে, ‘কবিতা আধুনিক পৃথিবীতে কারো পেশা নয়। উপরন্তু পেশামাত্রই প্রশিক্ষণযোগ্য। প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্ততঃ সাধারণ মানের চিত্রকর, ভাস্কর, স্থপতি, গায়ক, যন্ত্রী, অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী যে তৈরি করা যায় তা বেশ বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করেছেন আর্ট কলেজ, স্থাপত্য ফ্যাকাল্টি, নাট্য একাডেমী ও নাচ গানের হরেক রকমের স্কুল। কিন্তু কবির জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষণের আয়োজন কোন সুফল আনেনি।...বস্তুতঃ কবিতা প্রশিক্ষণযোগ্য পেশা নয়।’ 
আধুনিক কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- রূপকের ব্যবহার। পরিমিত রূপক শব্দ আধুনিক কবিতার শরীরকে ঋদ্ধ ও মজবুত করে। শব্দচয়নকে নান্দনিক করে তোলে। তবে তার সার্থক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। রূপক ব্যবহারে যতœবান ও সতর্ক না হলে কবিতার শরীর মেদবহুল এবং অনর্থক হয়ে পড়ে। সমকালীন কিছু কবিতায় লক্ষ্য রাখলে দেখা যায়, আধুনিকতা বা উত্তর-আধুনিকতার নামে অপ্রয়োজনীয় এবং সার্থকহীন রূপকের ব্যবহার বিরামহীনভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে কবিতা তার নিজস্ব বলয় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্য গোচরে, যা কবিতার পাঠকের জন্য হুমকিস্বরূপ। কবিতাকে এমন জটিল  বা শব্দবিভ্রাট করে পাঠকের সামনে হাজির করলে কবিতার পাঠকপ্রিয়তা ক্রমেই হারাবে। উদ্ভট-জটিলতায় সংক্রমিত হবে কবিতার শিরা-উপশিরা। কবিতাকে নিজের গতিতে হাঁটতে দিতে হবে। রূপক শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের ইঙ্গিত ঠিক রেখে কবিতাকে হাঁটাতে হবে। কবির ইঙ্গিতকে একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তর করে কবিতার ভেতর পাঠক ডুব দেবে। খুঁজে পাবে আক্ষরিক অর্থের আড়ালে অপার সৌন্দর্য এবং বোধের পুকুর। যেখানে পাঠক ডুব দিয়ে তুলে আনবে কবিতার রূপ ও রস। কিন্তু রূপক শব্দের আড়ালে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন শব্দের মনগড়া অর্থ কবিতায় স্বীকৃত নয়।  বরং তা কবির প্রতি পাঠকের একটি অস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। সমকালীন কবিতায় কবিদের এই বিষয়টি খেয়াল রাখা বেশ জরুরী। নইলে আধুনিক কবিতাটি হয়ে উঠবে জটিল থেকে জটিলতর। অপ্রাসঙ্গিক রূপক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি’ গ্রন্থে উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ‘রূপক-কাব্য’ বিষয়ে বলেছেন, ‘রূপক কবিতা কাহিনীমূলক। এই জাতীয় কবিতায় সমান্তরালভাবে আক্ষরিক অর্থ ছাড়া অন্য এক গভীর অর্থের ইঙ্গিত থাকে। অর্থটি আপাতপ্রতীয়মান নয়, কবির ইঙ্গিত অনুসরণ করে তাকে খুঁজে নিতে হয়।’ একই বিষয়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘যে কোনো রূপক থেকেই একটি মনগড়া অর্থ তৈরি করা যায়। কিন্তু সেই অর্থ যদি কবির স্বীকৃতিতে সমর্থিত না হয় বা সেই অর্থের সমর্থন-সূচক কোনো ইঙ্গিত যদি রচনার মধ্যে সমান্তরালভাবে না থাকে তাহলে মনগড়া অর্থটিকে পরিত্যাগ করাই ভালো। স্বেচ্ছামতো রূপক আবিষ্কারের চেষ্টা মূল অর্থকে বিকৃত করতে পারে।’ সুতরাং, উল্লিখিত বিষয় পর্যালাচনা করলে বোঝা যায় যে, কবিতা অর্থবহ করে তুলতে না পারলে কবিতার পাঠকপ্রিয়তা হারাতেই পারে। এক্ষেত্রে এখানে একটি আন্দাজভিত্তিক জনশ্রুতি তুলে ধরা যেতে পারে। যদিও এই আন্দাজভিত্তিক জনশ্রুতির যৌক্তিকতার বিষয়ে আরও আপেক্ষিক গবেষণা প্রয়োজন। বলা হয়,  একজন তরুণ বা নবীন কবিÑ  অন্য তরুণ-নবীন-প্রবীণ সকল কবির কবিতায় আগ্রহ রাখে বেশ। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে, একজন প্রবীণ কবি স্বভাবতই একজন নবীন বা তরুণ কবির কবিতায় সহজে আগ্রহী হতে পারে না। কারণ, ঐ তরুণ বা নবীন কবির কবিতায় যথেষ্ট দুর্বোধ্যতা কিংবা জটিলতা বিদ্যমান। কতিপয় এমন কবির কারণে সব তরুণ বা নবীনকে একই মাপকাঠিতে আনা উচিৎ হবে না। কেননা, তরুণ বা নবীন কবিদের হাত থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং আসছে বেশ নান্দনিক কবিতা, কালোত্তীর্ণ কবিতা; যা প্রশংসার দাবী রাখে। এক্ষেত্রে প্রবীনদের কবিতাও কম দাবী রাখে না। 
প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সমকালীন কবিতায় খেয়াল করলে দেখা যায় যে, কেউ কেউ কবিতার নিজস্ব ঢং রপ্ত করে তা পাঠকের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিচ্ছে। কিছু উদ্ভট শব্দচয়ন বা পঙক্তি একত্রিত করে কবিতা নির্মাণ করছে। কবিতা পাঠক বুঝুক বা না-ই বুঝুক কবি সেসব দেদারছে লিখে যাচ্ছে। আসলে, কবি নিজেকে জ্ঞানী মনে করবে আর পাঠককে কবিতা বোঝে না (!) ভেবে মূর্খ মনে করবে, এমনটা সত্য নয়। কেননা, পাঠকের অত বেশি দায় পড়ে যায় নি যে, কবির কবিতা বুঝে ওঠার জন্য আলাদা করে অভিধান খুলে বসতে হবে। শিক্ষককে যেমন ছাত্রদের পড়া বুঝিয়ে দিতে হয়, তেমনি কবির প্রধান কাজ পাঠকসুলভ কবিতা রচনা করা। যাতে কবির কবিতা পড়ে পাঠক পাঠোদ্ধার করতে পারে কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। এক্ষেত্রে, সমালোচক ক্লাইভ বেল শিল্পের রূপকলাকে ‘তাৎপর্যব্যঞ্জক’ হিসেবে রূপায়িত করেছেন। তাই বলে, কবিতায় কবির যে স্বাধীন সত্ত্বা থাকবে না তা কিন্তু নয়। কবিতায় কবির স্বাধীনতা আকাশ কিংবা সমুদ্রের মত বিশাল। এই স্বাধীনতার সুযোগে কবি  তার কবিতায় যা ইচ্ছে তাই লিখে পাঠকের জন্য উপহার দিতে পারে না। পাঠকের চোখের দিকে তাকিয়ে কবিতাকে হাঁটতে দিতে হবে। কবিতাকে জনচেতনার সামনে দাঁড়াতে দিতে হবে। তবেই পাঠক নিজে নিজে কবিতাকে খুঁজে নেবে। ‘বাংলা সাহিত্য : কয়েকটি প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে মাহবুবুল হক ইংরেজ লেখক ই.এম. ফস্টারের একটি অভিমত উল্লেখ করেছেন, ‘অন্তত তিনটি কারণে লেখকের স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন: প্রথমত, স্বাধীনতা ছাড়া লেখক কোনো কিছুর সৃষ্টির প্রেরণা পান না; দ্বিতীয়ত, লেখক যা ভাবেন তা প্রকাশ করার স্বাধীনতা না থাকলে লেখকের সৃষ্টি সার্থক হয় না; তৃতীয়ত, জনসাধারণের চেতনা ও মানস বিকাশের জন্যও এগুলি দরকার।’ 
বর্তমানে, ফ্রি হোম সার্ভিস ডেলিভারির মত কবিতাকে জোর করে পাঠকের দেরাজে ঢুকিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা, সমকলীন সাহিত্যবাজারে একটি আলাচিত বিষয়। সাথে আধুনিক কবিতার নামে সংগতিহীন ডামাডোলতো আছেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আদলে সৃষ্টি হচ্ছে ডজন ডজন কবি। ইচ্ছেমতো শব্দ সাজিয়ে কবিতা তৈরির অপচেষ্টা দিন দিন বাড়ছে। দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠকের চেয়ে লেখক-কবির সংখ্যা ঢের বেশি। কবিতা কাগজ-কালির বদলে ভার্চুয়্যাল দেয়ালে ঠাঁই পাচ্ছে। ফলে দিনে দিনে আমরা পড়তে ভুলে যাচ্ছি, আগ্রহী হচ্ছি লেখনিতে। কারণ, আমরা অনুকরণ বা অনুসরণ করে অন্য কবি  বা লেখকের মত লিখতে আগ্রহী। অথচ, মানোত্তীর্ণ কোনো কবির কবিতা পড়ার চর্চা বা আগ্রহ দিনে হ্রাস পাচ্ছে, এসব অতি-আধুনিকতার সুফল। একটি বিষয় বলে রাখা জরুরী যে, কবিতায় অনুকরণবাদ বা অনুসরণবাদ কবিতাকে জটিল করে তোলে, অস্পস্ট করে তোলে। কেননা সেই কবিতায় সংশ্লিষ্ট কবির নিজস্বতা বলে কিছু থাকে না। চাঁদের আলোর মত সবটুকুই ধার করা। আর আরোপিত কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। কবিতার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খেয়াল রাখা কবির বুদ্ধিদীপ্ত কাজ বলে মনে করা হয়। 
আর একটি বিষয় হলো, আধুনিক কবিতায় শব্দের সংযোজনা এমনভাবে রক্ষা করতে হবে যা কবিতার তাৎপর্যকে ইঙ্গিত দিতে পারে। শব্দের সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে কবির কল্পনার আশ্রয় নিতে হতে পারে। কিন্তু কবির কল্পনা যেন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সরলরৈখিক সংযোগ স্থাপন করে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। অহেতুক জটিল অধ্যায়ের অবতারণা থেকে নিজেকে দূরে রাখা শ্রেয়। কবির সাথে পাঠকের মানসিক দূরত্ব তৈরি হলে কবিতাকে পাঠক গ্রহণ না-ও করতে পারে। ‘সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি’ গ্রন্থে উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ‘কল্পনাশক্তি’ বিষয়ে বলেছেন, ‘কবিতার মধ্যে এই রকম বিচিত্র ও কখনো কখনো বিপরীত ভাবের মিলন যে ঘটে তা কবির কল্পনাশক্তির বলেই ঘটে থাকে। কাজেই কল্পনা কথাটির অর্থ সৃষ্টি-ক্ষমতা। এই কল্পনাশক্তির বলেই অপ্রত্যক্ষ বস্তু প্রত্যক্ষ সত্যে পরিণত হয়, যা মানসিক ব্যাপার তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সত্য হয়ে ওঠে।’ সুতরাং, কবিতা পাঠকের অনুকূলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হওয়া জরুরী। বাস্তবতার নিরিখে বাস্তবচিত্রের পাশাপাশি কল্পনাকে কবিতায় স্থান দিতে হলে ভাবপ্রকাশে,  এবং শব্দচয়নে আধুনিক ও চৌকষ হতে হবে। ভাবপ্রকাশে কবির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। পাঠক কবিতাকে আধুনিকতার মানদন্ডে নিরীক্ষণপূর্বক কবিতার প্রতি আলাদা কাব্যিক-প্রীতি তৈরি করে। কবিতায় কখনও কবির আত্মতুষ্টি থাকতে নেই। থাকতে নেই মানসিক প্রশান্তি। তাহলে কবির মৃত্যু হয়। কবিতার ক্ষেত্রে কবিকে আরও বেশি ক্ষুধার্ত, তুষ্টিহীন, প্রশান্তিহীন হতে হবে। নইলে নতুনত্বের সৃষ্টি হবে কি করে? কবিতার খিদে ফুরিয়ে গেলে কবিতায় নান্দনিকতা আসে না। খিদেকে জাগিয়ে রাখতে হবে। তবে এ কথাও সত্য যে, কবিতায় আপেক্ষিক মানসিক প্রশান্তির প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ নিজে কবিতা থেকে প্রশান্তি না পেলে, পাঠকও পাবে না। কবিতার রূপ ও তার উপাদেয় উপাদান কবিতার ভিতরেই লুকিয়ে থাকে। কেবল দেহগত বা রূপগত সৌন্দর্যই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ভেতরকার সৌন্দর্যকে বাইরে প্রস্ফূটিত করা, তবেই পাঠক কবিতার রূপ-রসে সিক্ত হবে। কবিতার ঘ্রাণে বিমোহিত হবে, আন্দোলিত হবে।
আধুনিকতা নিয়ে খুরশীদ আলম বাবু তার ‘আধুনিকতা ও সাম্প্রতিকতার সমন্বয়’ (দৈনিক জনকন্ঠ, ১০.০৮.২০১৮) প্রবন্ধে বলতে চেয়েছেন, ‘আধুনিকতার সংজ্ঞা নির্মাণ করা একটি দুঃসাহসিক কাজ। মনে রাখা প্রয়োজন আধুনিকতাকে সংজ্ঞায় নির্ণীত করার প্রয়োজনে পূর্বের কবিদের রচনাবলী বাতিল করা যায় না, তেমনভাবে কোনো মতবাদের অভিধায় একে চিহ্নিত করা ভুল প্রচেষ্টা বলে গণ্য হবে।’ আধুনিকতার আরও গভীরে হাঁটতে হাঁটতে উজ্জ্বল সিংহ তার ‘প্রসঙ্গ আধুনিকতা, আধুনিক কাব্য’ (কালি ও কলম) প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘যুক্তিবাদকেই যে আধুনিকতাবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলা যায়, সেটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন ম্যাক্স ভেবের, কারণ উনিশ শতকের শেষের দিক থেকে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকেই আধুনিকতাবাদ হিসেবে মনে করা হতো। আর আধুনিকতার সাধারণ লক্ষণ হলো নতুন-নতুন ভাবনা-চিন্তা, দর্শন, শৈলী, মনোভঙ্গি, দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি বিষয়ে তীব্র আগ্রহ, কৌতূহল এবং তার যথাযথ উপস্থাপনা।’ উল্লেখ্য যে, একদল তরুণ কবির আত্ম-সচেতন বিদ্রোহের ফলে কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে থাকে। কবিতার সনাতন পথের বিপরীত দিকে হেঁটে কবিতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আধুনিক মননে। এই কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেনÑ বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ। মূলত এ সকল কবির মতামত প্রকাশের উল্লেখযোগ্য আশ্রয়স্থল ছিল তৎকালীন ‘কল্লোল’, ‘কালিকলম’, ‘প্রগতি’ ইত্যাদি সাহিত্যপত্রিকা। অনেকের মতে, ‘কল্লোল’ পত্রিকাটির মাধ্যমেই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূচনা ঘটেছিল। আরও উল্লেখ্য যে, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত আধুনিক বাংলা সাহিত্যসূচনায় বেশ আলোচিত। অন্যদিকে, তত্ত্বগত দিক থেকে বিচার করলে বাংলা সাহিত্যে কবিতার ভূবনে প্রথম আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিরিশ দশকের পর থেকে কবিতায় আধুনিকতার বিষয়ে একটি দিক খুব জোরালোভাবে উঠে আসে, সেটি হলো রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত কবিতাই আধুনিক কবিতা। রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত রবীন্দ্রোত্তর কবিতা যদি আধুনিক হয় তবে রবীন্দ্রনাথ কি অনাধুনিক? মোটেও সেটি নয়। বরং রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জসীমউদ্দীনসহ তৎকালীন কবিদলও আধুনিকতার চূড়ান্ত জ্যামিতিক-বৃত্ত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, তিরিশের যুগে যে আধুনিকতার সূত্রপাত ধরা হচ্ছে, মূলত তার গোড়াপত্তন প্রাচীন যুগ থেকেই। চর্যাপদ কি এখন অনাধুনিক? চর্যাপদ ‘তৎকালীন- আধুনিক’ না হলে আধুনিক যুগে এসেও পাঠ্যবইয়ে চর্যাপদ পড়ানো হতো না। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ, প্রাক-মধুসূদন যুগ, প্রাক-রবীন্দ্র যুগ কিংবা রবীন্দ্র-নজরুল-ফররুখ-জসীমউদ্দীনসহ অন্যান্যরা আধুনিক সমাজের অধ্যয়নের মূল পাথেয় হতো না। সেসব যুগেও ‘তৎকালীন- আধুনিক’ কাব্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগের রচনাবলীতে আধুনিকতার শিকড় খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে, আধুনিকতার ধারণাটি একমাত্রিক নয় বরং বহুমাত্রিক। যেটি এসকল কবির রচনাবলীতে উপলব্ধ। আশরাফ আজিজ তার ‘বাংলা কবিতা : আধুনিকতা ও বিকাশের ধারা’ (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৭.০৪.২০১৭) প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘আধুনিকতা সব সময়েই আপেক্ষিক। আজ যা আধুনিক তা অবশ্যই পরবর্তীতে আর আধুনিক থাকবে না এবং পূর্ববর্তীকালে যা আধুনিক ছিল আজ আর তা আধুনিক নেই। এ থেকে এটি বোঝা যায় যে, কাল-পর্যায়ই আধুনিকতার ভিত্তি। অন্যদিকে, উজ্জ্বল সিংহ তার ‘প্রসঙ্গ আধুনিকতা, আধুনিক কাব্য’ (কালি ও কলম) প্রবন্ধে বলেছেন, ‘সমকালে সকলই আধুনিক, বর্তমানে যা আধুনিকতা হিসেবে গণ্য, পঁচিশ-পঞ্চাশ-একশ বছর পর তা-ই হয়ে ওঠে অনাধুনিকতা। অতএব, সময়ের বিচারে আধুনিকতার বিচার করা উচিৎ নয়। সময়ের মতোই আধুনিকতা একটি কল্পিত বা পরাবাস্তব ধারণা, দুটোই সতত প্রবহমান।’ কবিতার কাল নিয়ে রুহুল মাহফুজ জয় তার ‘কবিতার আধুনিকতা উত্তরাধুনিকতা ও পাঠক’ (দৈনিক যুগান্তর, ১২.০৬.২০১৫) প্রবন্ধে ‘রবার্ট ফ্রস্ট’র একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন, ‘আধুনিক মানুষকে যিনি তার কথা শোনাতে পারেন, তিনিই হলেন আধুনিক কবি। কবে তিনি বেঁচে ছিলেন সেটা বড় কথা নয়। তবে যদি আধুনিককালে বেঁচে থেকেই তিনি কাজ করে থাকেন, তাহলে তিনি আরও বেশি আধুনিক।’ উপরোক্ত উক্তিগুলো থেকে বোঝা যায়, একটি দৃষ্টিকোণ আধুনিকতার বিষয়ে কালকেই দাবী করছেন আবার অন্যরা তার বিপরীতে অবস্থান করছেন। সবুজ মেঠোপথের সনাতন বেদনার পাশাপাশি কবিতায় নগরজীবনের আর্তনাদ, সমকালীন জীবনের ক্লান্তি-ব্যথা-ক্লেদ-কান্না-হাসির সংমিশ্রণ,  নতুন সমাজ সৃষ্টির স্পষ্টতা এবং মুক্তির স্বাদ থাকবে আধুনিক কবিতায়। যে স্বাদে ভুলে যাবে মননের বিচিত্র বেদন। ভিন্নধর্মী দৃষ্টিকোণে আলোকিত হবে আগামীর আলো। এসবের কারণেই কবিতায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজনের সফল প্রয়াস ঘটিয়েছেন তৎকালীন আত্ম-সচেতন কবিদল। ‘হাজার বছরের বাংলা কবিতা’ গবেষণাগ্রন্থে মাসুদুল হক, উল্লেখ করেছেন, ‘আধুনিক বাংলা কবিতার সূত্রপাত ১৯২০ সালের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়। একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আধুনিক কবিতার সূত্রপাত ঘটেছিল তৎকালীন সময়ের ইংরেজি কবিতার নতুন আন্দোলনের প্রভাবে। ১৯১৮ সালে হপকিন্সের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঞযব চড়বসং ড়ভ এবৎধৎফ গধহষবু ঐড়ঢ়শরহং প্রকাশের পর থেকে ইংরেজি কাব্য রসিকেরা আধুনিক কবিতার বিচিত্র স্বাদ পেলেন।...দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় আধুনিক কবিতার স্বাতন্ত্র্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঠিক এ সময়েই বাংলা কবিতাতেও বিবর্তনের হাওয়া লেগে যায়।’ সুতরাং, একদল তরুণ কবির সফল প্রয়াসে যে সূচনা ঘটেছে তার যথার্থতা বজায় রাখা জরুরী। কবিতায় প্রবর্তন ও পরিবর্তন প্রয়োজন, তবে মাত্রারিক্ত কাম্য নয়। কবিতায় আধুনিক কিংবা উত্তর-আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়ার জন্য জীবনবোধের নিরেট কথামালা তুলে ধরা প্রয়োজন। অপ্রাসঙ্গিক শব্দচয়ন-রূপক-উপমা ইত্যাদি ব্যবহার করে কবিতার শরীরকে জটিল করা কতটুকু যৌক্তিক তা পুনর্বার ভেবে দেখা উচিৎ। তাই, জটিলতাহীন কবিতার খিদেয় বেড়ে উঠুকÑ  সমকালীন কবিতার পরিবার। 
তথ্যঋণঃ
১. আধুনিক বাংলা কবিতা: প্রাসঙ্গিকতা ও পরিপ্রেক্ষিত; মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম প্রকাশ-১৯৮৫, পৃ-০১, ০৩।
২. সাহিত্য ও সমালোচনার রূপ-রীতি; উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পঞ্চম সংস্করণ-এপ্রিল, ২০১৬, পৃ-২৪, ৫০, ২৪৫ ।
৩. বাংলা সাহিত্য : কয়েকটি প্রসঙ্গ; মাহবুবুল হক, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি-২০০৯, পৃ-৬১।
৪. হাজার বছরের বাংলা কবিতা; মাসুদুল হক, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি-২০০৮, পৃ-৪৭।
৫. আধুনিকতা ও সাম্প্রতিকতার সমন্বয়; খুরশীদ আলম বাবু, দৈনিক জনকন্ঠ, ১০.০৮.২০১৮।
৬. বাংলা কবিতা : আধুনিকতা ও বিকাশের ধারা; আশরাফ আজিজ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৭.০৪.২০১৭।
৭. প্রসঙ্গ আধুনিকতা, আধুনিক কাব্য; উজ্জ্বল সিংহ, মাসিক কালি ও কলম।
৮. কবিতার আধুনিকতা উত্তরাধুনিকতা ও পাঠক; রুহুল মাহফুজ জয়, দৈনিক যুগান্তর, ১২.০৬.২০১৫।

প্রকাশিত: শুক্রবার ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

Sunday, November 4, 2018

যে কবিতা আবৃতির জন্য জেলে গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান


হাজার দ্বীপ দিয়ে ঘেরা সুসজ্জিত তুরস্ক ভূখণ্ড। এর কিছু অংশ ইউরোপের অন্তর্গত হলেও অধিকাংশ এলাকা পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত। তাই একে দ্বি-মহাদেশিক দেশ বলা হয়। দেশটি পশ্চিমে ইজিয়ান সাগর ও গ্রিস, উত্তরে বুলগেরিযা ও কৃষ্ণ সাগর, পূর্বে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া ও ইরান এবং দক্ষিণে ইরাক, সিরিয়া ও ভূ-মধ্যসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত।
সাগরবেষ্টিত উপকূল জুড়ে ব্লু-ওয়াটার বা নীল জলরাশি, গ্রিস বোট, সার্ফিং-রাইডস, সী-বোট, ডাইভিং সরঞ্জামাদি, কেনাকাটার মনোরম ও বিলাসবহুল শপিং প্লেসেস, সী-সাইড রিসোর্ট, ছুটির দিন আর আনন্দ উদযাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা-আয়োজন দিয়েই সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছে এখানকার সবকিছু।
এরদোগানের কবিতা সম্পর্কে জানার আগে তুরস্ক সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক। তুরস্কের মোট আয়তন সাত লাখ ৭৯ হাজার ৪৫২ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৬৪ বর্গ কি.মি. ইউরোপীয় অংশে এবং বাকি সাত লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৮ বর্গ কি.মি. এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা ৭ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার। জনসংখ্যার ৯৮.২% ভাগ মুসলমান। দেশটির ভাষা তুর্কী এবং মুদ্রার নাম লিরা।
তুরস্কের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো, নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশ্বসেরা মসজিদ, স্থাপত্যশিল্প, চোখ ঝলসানো মিনার, আকাশচুম্বি গম্বুজ ইত্যাদি। এগুলো তুরস্কের জাতীয় নিদর্শনে পরিণত হয়েছে। তুরুস্কে ব্যাপকহারে বাড়ছে মসজিদ। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৮৬ হাজার ৭৬২ টি মসজিদ রয়েছে তুরস্কে। শুধু রাজধানী ইস্তাম্বুলেই রয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ টি মসজিদ।
সম্প্রতি তুরুস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় ধর্মীয় অঙ্গনে যারা কাজ করেন তাদেরকে নিয়ে ‘মসজিদ সপ্তাহ’ পালন করেছে। সভ্যতা-সংস্কৃতি বিস্তারের ক্ষেত্রে মসজিদের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও গুরুত্ব কী ছিল তা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করাই ছিল এর মূখ্য উদ্দেশ্য।
প্রতিবছরই এ ধরনের মসজিদ সপ্তাহ পালন করা হয় তুরস্কে। এর যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৩ সালে। মসজিদের কার্যক্রমে বৈচিত্র আনা, মসজিদের পাশে পাঠাগার গড়ে তোলা, মসজিদে শিক্ষামূলক বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা ইত্যাদি কার্যক্রমসহ প্রতিবছরই নতুন নতুন চিন্তা ও পরিকল্পনা করা হয় এসব অনুষ্ঠানে।
উল্লেখ্য, মসজিদ নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করার কারণে ১৯৯৮ সালে জেল খেটেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তিনিই এখন এই মসজিদের দেশটিকে শাসন করছেন।
তুরস্কের টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র যাত্রা শুরুর পর তিনি হলেন ১৮তম প্রেসিডেন্ট । রাজনীতিতে আসার আগে এরদোগান পেশাদার ফুটবলার এবং একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় নাজমুদ্দিন আরবাকানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সালভেশন পার্টির (মিল্লি সালামত পার্টি) মাধ্যমে।
এরদোগান ১৯৮৫ সালে রাফাহ পার্টির ইস্তাম্বুল প্রদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ইস্তাম্বুল প্রদেশ থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে রাফাহ পার্টি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ নির্বাচনে এরদোগান ইস্তাম্বুলের মেয়র এবং গ্রেটার মেট্রো ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির কারণে মেয়র হিসেবে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ তুরস্কে এক জনসভায় তুর্কি জাতীয়তাবাদী কবি জিয়া গোকাল্পের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনায় ঝড় তোলেন। কবিতাটি ছিল এ রকম Mosques are our barracks. domes our helmets, minarets our bayonets, belevers our soliders. এ কবিতা আবৃত্তির দায়ে তৎকালীন তুর্কি সেকুল্যর সরকার তাকে আটক করে দণ্ডিত করে।
এরদোগানের দল ২০০২ সালের নভেম্বরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বিজয়ী হয়েও আইনগত নানা প্রক্রিয়ার কারণে এরদোগানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০০৩ সালের ১৪ মার্চ তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কারণ মেয়র থাকা অবস্থায় কবিতা পড়ার কারণে তিনি শাস্তি ভোগ করছিলেন।
আর এ কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ গুল তার আসন থেকে পদত্যাগ করলে সে আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এরদোগান। নিবাচিত হয়ে তিনি পার্লামেন্টে আসেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আরো দুদফায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে একে পার্টি তুরস্কের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বার বার বিজয়ী হয়ে আসছে। যে কবিতাটি আবৃত্তি করে তিনি জেলে গিয়েছিলেন তা এখানে তুলে ধরা হলো:

সেনাবাহিনীর জন্য দোয়া
- জিয়া গোকাল্প


হাতে হাতিয়ার, অন্তরে ঈমান
আমার চাওয়া দু’টি, দ্বীন এবং ওয়াতান
আমার ঘর সেনা ক্যাম্প, আমার নেতা মহান সুলতান
সুলতানকে রক্ষা করো হে ইয়া রব
তার হায়াত দীর্ঘায়িত করো হে রব


আমাদের পথ গাজীর, শেষ ইচ্ছা শাহাদাত
আমাদের ধর্ম সততার সাথে সেবা করা
ওয়াতান আমাদের মা, বাবা আমাদের মিল্লাত
ওয়াতানকে সমৃদ্ধ করো হে রব
মিল্লাতকে সুখি করো হে রব


তোমার পতাকা তাওহিদের, আমার পতাকা হেলাল
একটি সবুজ, একটি অন্যটির পরিপূর্ণ
ইসলামের ব্যথায় ব্যথিত করো, দুশমন থেকে প্রতিশোধ নেয়ার তাওফিক দাও
ইসলামকে রক্ষা করো হে রব
দুশমনদের ধ্বংস করো হে রব


যুদ্ধের ময়দানে দাও সাহসী বীর ও সেনাপতি
যে দ্বীন এবং দেশের জন্য শহীদ হবে
যে হবে অগ্নিশিখা, যুদ্ধের ময়দানে থাকবে শেষ পর্যন্ত
শহীদদের কবুল করো হে রব
পরিবারদের দুর্বল হতে দিয়ো না হে রব


কমান্ডার, অফিসার আমাদের পিতা
সার্জেন্ট, ওমবাস আমাদের নেটওয়ার্ক
শৃঙ্খলা এবং সম্মান আমাদের কানুন
সেনাবাহিনীকে শক্তি দাও হে রব
পতাকা সুউচ্চ রাখো হে রব


মিনার আমাদের বেয়োনেট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট
মসজিদ আমাদের ব্যারাক, মোমিনরা আমাদের সৈন্য
আমরা দ্বীনি যুদ্ধের জন্য অপেক্ষায়
আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর
আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর


Source: www.dailynayadiganta.com

Wednesday, August 15, 2018

হাতুড়ির নিচে জীবন - রফিক আজাদ


হাতুড়ির নিচে জীবন
- রফিক আজাদ

নানান রকম হাতুড়ির নিচে এই জীবন।
নানান রকম হাতুড়ি উঠে এসে পড়ছে তোমার মাথায়,
নানা - রঙ পোশাক পরা হাতের হাতুড়ি,
হাতুড়ি ধরা দৃঢ় ভিন্ন-ভিন্ন হাতগুলোর 
উদ্দেশ্য কিন্তু এক ও অভিন্ন
তোমাকে নিস্পিষ্ট করা, 
নির্মূল করা,
এই হাতুড়িগুলি ধরে আছে যে হাতগুলো
 তাদের মালিকেরা কেউ চক্রাবক্রা, কেউবা এক রঙ।

 ছোট বড় নানা মাপের, নানা হাতের 
হাতুড়িই নির্দিষ্ট আছে তোমার জন্যে
জন্ম-মুহূর্তে থেকে। হাতুড়ির ঘা - খাওয়া থেকে 
নিষ্কৃতি নেই।
এমন কি, তোমার পছন্দ মতো হাতুড়ির আঘাত
তুমি বেছে নিতে পারোনা।
তোমার জন্যে 
বরাদ্ধকৃত হাতুড়িটি অন্যেরাই বেছে নেবে। 
তুমি শুধু মাথা পেতে থাকার স্বাধীনতাটুকু 
ভোগ করতে পারে। হায় স্বাধীনতা !
‘স্বাধীনতা’ শব্দটি কেবল নানা বর্ণের, নানা মাপের 
পোশাক পরিহিত লোকেরাই নির্বিচারে 
ব্যবহার করতে পারবেন,
তোমার কপালে বরাদ্ধকৃত শাস্তিটুকু কেবল মাথা পেতে 
নেয়ার স্বাধীনতা থাকবে তোমার।
স্বাধীনতার ফসল ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেয়া হবে, 
তুমি তুলে নিতে পারবে না নিজে সেই শস্য!
আমাদের পূর্বে - পুরুষেরা ছিলেন পরাধীন।
কিন্তু তাদের অধিকারে  ছিলো ইচ্ছের স্বাধীনতা, 
স্বাধীনতার সৈনিক তুমি, অথচ তোমার নেই
সেই স্বাধীনতা।

তারকাঁটার মতো তুচ্ছ এই জীবন,
তোমার মাথা যেন তারকাঁটার ছাঁদ,
তারকাঁটাদের জন্ম-মৃত্যুর রহস্য নেই কোনো, 
জন্মই হয় ওদের নিস্পিষ্ট হতে
হাতুড়ির নিষ্পেষণের জন্যে তোমার ঐ মাথা 
সর্বদাই তৈরি থাকবে 
এমন একটা দলিলে স্বাক্ষর করেই যেন 
তোমার জন্ম
নানা রকমের হাতুড়ি আছে এই দেশে, এ সমাজে,
স্থানীয়ভাবে প্রচুর পরিমাণ হাতুড়ির উৎপাদন
হওয়া সত্বেও কিছু সংখ্যক মসৃণ হাতুড়ির জন্যে 
আমদানী লাইসেন্স ইস্যু হয় ফি - বছর,
তোমার মাথায় ব্যবহার হেতু 
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে আনা হয়েছে 
বেশ কিছু সংখ্যক সুমসৃণ বিদেশী হাতুড়ি 
যার আছাড়িটুকু তৈরি হয় মূল্যবান ওক কাঠে,
উল্লেখ্য যে, একিলিসের বর্শার হাতলও ছিলো
ওক কাঠের তৈরি।

তাইতো, হাতুড়ির নিচে জীবন যাদের 
তাদের কথা বিস্তারিতভাবে বলার কিছু নেই 
তারা এতো অনুল্লেখ্য  যে, উল্লেখের কোন 
প্রয়োজনই বোধ করে না কেউ - এমনকি তারা
নিজেরাও নয়।
এই যখন অবস্থা, তখন 
বিদেশী হাতুড়ির জন্যে তৈরি যোগ্য 
মুন্ডুর সংখ্যা 
দিন - কে দিন বেড়েই যাচ্ছে ! অনুরূপভাবে 
দেশীয় হাতুড়িশিল্পের উৎপাদনও বাড়ছে
                    পাল্লা দিয়ে।
নানা রকম পোশাক-পরা হাতে তো হাতুড়ি 
                          ধরিয়ে দিতে হবে।
হাতুড়ির ওঠা -পড়ার শব্দে চমকিত চারদিক, 
তোমার মাথায় এসে পড়া হাতুড়ির বাড়ি খেয়ে 
ওজন বুঝে তুমি বলে দিতে পারো এ - কার হাতুড়ি!
নানা রকমের আঘাতই তো পড়ছে এই মাথায় আজকাল।
অনেকগুলো দেশী
হাতুড়ির বাড়ি খেয়ে যখন ঝিম মেরে আছো, 
ঠিক এই সময়ে মসৃণ একটা ঘা পড়লো এসে 
তোমার মাথায় - তত্মুহূর্তেই কেন যেন
জীবনের সবচেয়ে প্রাণঘাতী চিৎকারটিই 
দিয়ে উঠেছো তুমি।
পাথরের আঘাতে যে অভ্যস্ত
তাকে সহসা একটি বকুল ফুলের মালা 
ছুড়ে দিয়ে দেখো কী হয় অবস্থা তা !
তবেই মসৃণ আঘাত যে কতো মারাত্মক,
সে সম্পর্কে সত্যিকার উপলদ্ধি হতে পারে তোমার!
অবশ্য একথা সত্য যে, সবধরনের হাতুড়ির নিচে 
মাথাটি  পেতে দিতে পারাতেই তোমার এই  
জীবনের সার্থকতা!!

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>



এই কবিতা সম্পর্কে একটি খন্ড বক্তব্য: কবি বা কবিতা নিয়ে কথা বলার সময় নয় এটা। আবার কবির কবিতাই তো সবচেয়ে জোরালো প্রতিবাদ। এরশাদের সামরিক নিপীড়নের কালে কবি রফিক আজাদ লিখেছিলেন ‘হাতুড়ির নিচে জীবন’। মাত্র তিন শব্দের বাক্য দিয়ে কবি যা বুঝিয়েছেন, লক্ষ শব্দ লিখেও তা বোঝানো কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা কবিতার প্রাসঙ্গিকতা। যখনই লেখা হোক, বহু বছর বা যুগ পরেও তা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে বারবার।-গোলাম মোর্তোজা (www.thedailystar.net, আগস্ট ১৩, ২০১৮)