- তি তা স চৌ ধু রী

কবি জসীম উদ্দীনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবিতার একটি ধারার পরিসমাপ্তি ঘটে। জসীম উদ্দীনই ছিলেন সেই ধারার শেষ প্রতিনিধি। ১৪ মার্চ, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে জসীম উদ্দীন এই রৌদ্রছায়াময় পৃথিবী থেকে প্রস্থান করেন। জসীম উদ্দীন সেদিন শেষ রাতেই পরলোকে যাত্রা করেছিলেন। সে জন্য তাঁর মহাপ্রয়াণ সংবাদ আমি আমার এক ছাত্র মারফত সকালে জানতে পারি। পরে রেডিওতে শুনি। কবির মৃত্যু সংবাদে সেদিন অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছিলাম। কারণ মৃত্যুর কয়েক দিন আগেই তিনি কুমিল্লায় এসেছিলেন অলক্তের আমন্ত্রণে। তিনি প্রায় ষাট ঘণ্টার মতো কুমিল্লায় ছিলেন। এই সময়ে আমার বাসাটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।
সারা দিনরাত শুধু মানুষ আর মানুষ। কবিকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন। কাউকে তো ‘না’ করা যায় না—পেছনে কবি আবার অসন্তুষ্ট হন। জসীম উদ্দীন যে কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, আমি সেদিনই তা টের পাই। শুধু শিক্ষিত নন, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত—এমন বহু মানুষ কবিকে দেখতে এসেছিলেন। বোধ করি এই শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব মানুষই কবিকে একদিন ‘পল্লীকবি’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন এবং কবিও তা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। জীবনের শেষদিকে কবি তাঁর নামের শেষে ‘পল্লীকবি’ শিরোপাটি জুড়ে দিতেন। কারণ ওই সময়, কবি কথায় কিছু লেখকের উদয় হয়েছিল, যাঁরা জসীম উদ্দীন নামে পত্র-পত্রিকায় লিখতে শুরু করেছিলেন। কবির জসীম উদ্দীন তাই দেখেই গ্রামবাংলার জনগণের দেয়া খেতাব তিনি নামের শেষে জুড়ে দিয়েছিলেন। তাতে জসীম উদ্দীন থেকে অন্যরা অনায়াসেই পৃথক হয়ে গিয়েছিলেন। ‘পল্লীকবি’ জসীম উদ্দীন মানে এই নয় যে, তিনি পল্লীকবি ছিলেন।
জসীম উদ্দীন ছিলেন বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। কেননা তিনিই একদিন দুঃসাহসিক অঙ্গীকার নিয়ে বলতে পেরেছিলেন—‘তোমার গেঁয়ো মাঠটি আমার মক্কা হেন স্থান।’ পল্লীদরদী না হলে এমত উচ্চারণ কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যে কথা বলছিলাম, জসীম উদ্দীন কি পল্লীকবি? বাস্তবে এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। আমরা লক্ষ্য করেছি, এক শ্রেণীর গেঁয়ো কবি পল্লীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ, প্রেম-বিরহ-যাতনা, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার চিত্র তুলে ধরেন অত্যন্ত অমার্জিত ভাষায় ও ছন্দে। কোনো কাহিনীর উদ্ভট রূপায়ণে কিংবা কোনো বিরহ উপাখ্যান নির্মাণে গেঁয়ো কবিরা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অতি সহজেই। এতে একদিকে যেমন থাকে শিল্প চেতনার অভাব—তেমনি অন্যদিকে রুচি, মননশীলতা ও রসোপযোগিতার দৈন্য। এ সত্ত্বেও, লোক জীবনে এগুলোর আদর ও কদর অল্প নয়। এগুলো অমার্জিত ও অশ্লীল হলেও এসব ‘কথাকাব্য’ সর্বত্র সমাদর লাভ করে। যেমন মধ্যযুগের চণ্ডীমঙ্গল কাব্য, কালিকা মঙ্গল কাব্য, পূর্ববঙ্গ গীতিকা, মৈমনসিংহ গীতিকা ইত্যাদি একই জাতের কাব্য পদবাচ্য। অবশ্য পূর্ববঙ্গ গীতিকা ও মৈমনসিংহ গীতিকা ‘কথাকাব্য’ হিসেবে প্রচুর সমাদর লাভ করেছে, সন্দেহ নেই।
মোটকথা, এ ধরনের গীতিকা কিংবা কাব্যের রচয়িতাকে সাধারণত পল্লীকবি বা গেঁয়ো কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাহলে জসীম উদ্দীন কি এই অর্থে পল্লীকবি? জসীম উদ্দীন এ সংকীর্ণ অর্থে পল্লীকবি নন। কেননা জসীম উদ্দীনের নক্শী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, সকিনা কিংবা বেদের মেয়ে ইত্যাদির উপাদান-উপকরণ পল্লীতে পাওয়া গেলেও কোনো গৃহস্থ ঘরে এসব প্রাপ্তি রীতিমত দুঃসাধ্য। এছাড়া শিল্পসম্মত কাহিনী বুনন, কবিতার শব্দচয়ন, উপমা-উেপ্রক্ষা, চিত্রকল্প, প্রতীক ও রূপক নির্মাণে এ সত্য প্রমাণ করে না। রাখালী, কবর কিংবা পল্লীজননী যে কোনো একটি কবিতা নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে—জসীম উদ্দীনের কবিতায় কিংবা কব্যোপন্যাসে আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার বড় একটা দেখা যায় না। যে দু’চারটি প্রয়োগ দৃষ্টিগোচর হয় তাও মার্জিত এবং কুশলী হস্তে ব্যবহৃত। সুতরাং জসীম উদ্দীনে একজন পল্লীকবির চরিত্র ও চারিত্র্য মোটেও ধরা পড়ে না। যদিও বলা হয়ে থাকে, তাঁর মতো এমন ষোলআনা পল্লী দরদী কবি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এর অর্থ এই নয় যে তিনি পল্লীকবি। বড়জোর ‘লোককবি’ বলা যায়। কারণ গ্রামজীবন ও পরিবেশ তাঁর কাব্যে উপাদান জুগিয়েছে এবং তাঁর কবিতা-কলাকুশলের মধ্যেও গ্রাম্য আবহকে আমরা মূর্ত হতে দেখি। কিন্তু তাই বলে তিনি গ্রাম্য কবি নন। তাঁর চারণ-উপমা-রূপক প্রয়োগে তিনি যথেষ্ট মুন্শীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
জসীম উদ্দীন আসলে আধুনিক কবি। কারণ তিনি যেসব উপমা ব্যবহার করেছেন সেগুলোর উপাদান গ্রাম থেকে সংগৃহীত হলেও এর ব্যাখ্যাসূত্র প্রধানত নাগরিক। আবু সয়ীদ আইয়ুব আধুনিক শব্দটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এক হিসাবে যারাই আধুনিককালে কবিরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রতিভা ও সাধনার, যুগ্ম অধিকারে, তাঁরাই আধুনিক কবি যুগলক্ষণ অধিকৃত না হলেও। সুতরাং এ অর্থেও জসীম উদ্দীন আধুনিক কবি। অন্য পক্ষে ‘আধুনিক’ বাংলা কবিতার ভাব প্রকাশ ও আঙ্গিকে যাঁরা পরিবর্তন এনেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি তিনি। শুধু গ্রামীণ কবি ছিলেন না। কাহিনী কাব্য, ছন্দ ও গীতিময়তায় তিনি বাংলা কাব্যের নয়াদিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁকে বাদ দিয়ে আধুনিক কবিতার কথা চিন্তা করা যায় না।
তবে প্রশ্ন ওঠে, তিরিশ কিংবা তিরিশোত্তর কবিরা যে অর্থে আধুনিক, ছিলেন, জসীম উদ্দীন কি সে অর্থে আধুনিক? এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। কেননা বুদ্ধদেব বসু ও আহসান হাবীব যে অর্থে আধুনিক, বিষ্ণু দে ও শামসুর রাহমান সে অর্থে আধুনিক নন। আবার জীবনানন্দ দাশ ও অমিয় চক্রবর্তী যে অর্থে আধুনিক, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কিংবা প্রেমেন্দ্র মিত্র কিংবা সমর সেন সে অর্থে আধুনিক নন। বস্তুত আধুনিক শব্দটি জবষধঃরাব বা আপেক্ষিক। আধুনিকতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি—‘আধুনিকতা সময় নিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে।’ আবার জীবনানন্দ দাশ মনে করেন, ‘বাংলা কাব্যে কিংবা কোনো দেশের বিশিষ্ট কাব্যে আধুনিকতা শুধু আজকের কবিতায় আছে—অন্যত্র নয়, একথা ঠিক নয়।’ আবার কেউ বলেন, ‘কালের দিক থেকে মহাযুদ্ধ-পরবর্তী এবং ভাবের দিক থেকে রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত অন্তত মুক্তিপিয়াসী কাব্যকেই আমরা আধুনিক কাব্য বলে গণ্য করেছি।’ সুতরাং এসব অভিধায়ও জসীম উদ্দীন আধুনিক কবি।
তাঁর প্রকৃত পরিচয়—তিনি পল্লীবোধ ও পল্লী ইমেজের কবি। এর কারণও এই যে, প্রকৃতি উত্সারিত স্বাভাবিক ও মৌলিক লোকজ ধারাটি তাঁর আগে আর কেউ তেমন সহজভাবে আধুনিক কাব্যধারার সঙ্গে এক করতে সক্ষম হননি। এটি জসীম উদ্দীনের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল এজন্য যে, তিনি ছিলেন গ্রাম ও গ্রামবাংলার এক স্বাভাবিক অংশ। আর সেজন্যই তাঁর কবিতায় পল্লী প্রকৃতি, লোক জীবন ও লোক ঐতিহ্য অপূর্ব রূপলাভ করেছে।
জসীম উদ্দীনের কাব্যে পল্লী প্রকৃতি যেভাবে উপমা-উেপ্রক্ষা, রূপক ও চিত্রকল্প তথা আধুনিক কবিতার লক্ষণযোগে ধরা দিয়েছে—সমগ্র বাংলা কাব্যে এর দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। দু’তিনটি নজির এখানে খাড়া করি।
যেমন :
এই গাঁয়ের এক রাখাল ছেলে লম্বা মাথার চুল
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচাধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দু’খান সরু
গা-খানি তার শাওন মাসের যেমন তমালতরু।
[নকশী কাঁথার মাঠ]
কিংবা
দূর্বাচলে রাখলে তারে দূর্বাতে যায় মিশে,
মেঘের খাটে শুইয়ে দিলে খুঁজে না পাই দিশে।
বনের মাঝে বনের লতা পাতায় পাতায় ফুল
সেও জানেনা-নমু মেয়ের শ্যামল শোভার তুল।
[সোজন বাদিয়ার ঘাট]
এবং এভাবেই রূপকে-প্রতীকে-চিত্রকল্পে এবং উপমা-উেপ্রক্ষায় সমস্ত পল্লী প্রকৃতির ভেতরে ছড়ানো আছে জসীম উদ্দীনের কবিতার সাম্রাজ্য। মূলত সব দিক বিবেচনায় সহজেই বলা যায়, তিনি আধুনিক যুগের কবি।
সারা দিনরাত শুধু মানুষ আর মানুষ। কবিকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন। কাউকে তো ‘না’ করা যায় না—পেছনে কবি আবার অসন্তুষ্ট হন। জসীম উদ্দীন যে কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, আমি সেদিনই তা টের পাই। শুধু শিক্ষিত নন, অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত—এমন বহু মানুষ কবিকে দেখতে এসেছিলেন। বোধ করি এই শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব মানুষই কবিকে একদিন ‘পল্লীকবি’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন এবং কবিও তা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। জীবনের শেষদিকে কবি তাঁর নামের শেষে ‘পল্লীকবি’ শিরোপাটি জুড়ে দিতেন। কারণ ওই সময়, কবি কথায় কিছু লেখকের উদয় হয়েছিল, যাঁরা জসীম উদ্দীন নামে পত্র-পত্রিকায় লিখতে শুরু করেছিলেন। কবির জসীম উদ্দীন তাই দেখেই গ্রামবাংলার জনগণের দেয়া খেতাব তিনি নামের শেষে জুড়ে দিয়েছিলেন। তাতে জসীম উদ্দীন থেকে অন্যরা অনায়াসেই পৃথক হয়ে গিয়েছিলেন। ‘পল্লীকবি’ জসীম উদ্দীন মানে এই নয় যে, তিনি পল্লীকবি ছিলেন।
জসীম উদ্দীন ছিলেন বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। কেননা তিনিই একদিন দুঃসাহসিক অঙ্গীকার নিয়ে বলতে পেরেছিলেন—‘তোমার গেঁয়ো মাঠটি আমার মক্কা হেন স্থান।’ পল্লীদরদী না হলে এমত উচ্চারণ কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। যে কথা বলছিলাম, জসীম উদ্দীন কি পল্লীকবি? বাস্তবে এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। আমরা লক্ষ্য করেছি, এক শ্রেণীর গেঁয়ো কবি পল্লীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ, প্রেম-বিরহ-যাতনা, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার চিত্র তুলে ধরেন অত্যন্ত অমার্জিত ভাষায় ও ছন্দে। কোনো কাহিনীর উদ্ভট রূপায়ণে কিংবা কোনো বিরহ উপাখ্যান নির্মাণে গেঁয়ো কবিরা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অতি সহজেই। এতে একদিকে যেমন থাকে শিল্প চেতনার অভাব—তেমনি অন্যদিকে রুচি, মননশীলতা ও রসোপযোগিতার দৈন্য। এ সত্ত্বেও, লোক জীবনে এগুলোর আদর ও কদর অল্প নয়। এগুলো অমার্জিত ও অশ্লীল হলেও এসব ‘কথাকাব্য’ সর্বত্র সমাদর লাভ করে। যেমন মধ্যযুগের চণ্ডীমঙ্গল কাব্য, কালিকা মঙ্গল কাব্য, পূর্ববঙ্গ গীতিকা, মৈমনসিংহ গীতিকা ইত্যাদি একই জাতের কাব্য পদবাচ্য। অবশ্য পূর্ববঙ্গ গীতিকা ও মৈমনসিংহ গীতিকা ‘কথাকাব্য’ হিসেবে প্রচুর সমাদর লাভ করেছে, সন্দেহ নেই।
মোটকথা, এ ধরনের গীতিকা কিংবা কাব্যের রচয়িতাকে সাধারণত পল্লীকবি বা গেঁয়ো কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাহলে জসীম উদ্দীন কি এই অর্থে পল্লীকবি? জসীম উদ্দীন এ সংকীর্ণ অর্থে পল্লীকবি নন। কেননা জসীম উদ্দীনের নক্শী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, সকিনা কিংবা বেদের মেয়ে ইত্যাদির উপাদান-উপকরণ পল্লীতে পাওয়া গেলেও কোনো গৃহস্থ ঘরে এসব প্রাপ্তি রীতিমত দুঃসাধ্য। এছাড়া শিল্পসম্মত কাহিনী বুনন, কবিতার শব্দচয়ন, উপমা-উেপ্রক্ষা, চিত্রকল্প, প্রতীক ও রূপক নির্মাণে এ সত্য প্রমাণ করে না। রাখালী, কবর কিংবা পল্লীজননী যে কোনো একটি কবিতা নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে—জসীম উদ্দীনের কবিতায় কিংবা কব্যোপন্যাসে আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার বড় একটা দেখা যায় না। যে দু’চারটি প্রয়োগ দৃষ্টিগোচর হয় তাও মার্জিত এবং কুশলী হস্তে ব্যবহৃত। সুতরাং জসীম উদ্দীনে একজন পল্লীকবির চরিত্র ও চারিত্র্য মোটেও ধরা পড়ে না। যদিও বলা হয়ে থাকে, তাঁর মতো এমন ষোলআনা পল্লী দরদী কবি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। এর অর্থ এই নয় যে তিনি পল্লীকবি। বড়জোর ‘লোককবি’ বলা যায়। কারণ গ্রামজীবন ও পরিবেশ তাঁর কাব্যে উপাদান জুগিয়েছে এবং তাঁর কবিতা-কলাকুশলের মধ্যেও গ্রাম্য আবহকে আমরা মূর্ত হতে দেখি। কিন্তু তাই বলে তিনি গ্রাম্য কবি নন। তাঁর চারণ-উপমা-রূপক প্রয়োগে তিনি যথেষ্ট মুন্শীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
জসীম উদ্দীন আসলে আধুনিক কবি। কারণ তিনি যেসব উপমা ব্যবহার করেছেন সেগুলোর উপাদান গ্রাম থেকে সংগৃহীত হলেও এর ব্যাখ্যাসূত্র প্রধানত নাগরিক। আবু সয়ীদ আইয়ুব আধুনিক শব্দটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এক হিসাবে যারাই আধুনিককালে কবিরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রতিভা ও সাধনার, যুগ্ম অধিকারে, তাঁরাই আধুনিক কবি যুগলক্ষণ অধিকৃত না হলেও। সুতরাং এ অর্থেও জসীম উদ্দীন আধুনিক কবি। অন্য পক্ষে ‘আধুনিক’ বাংলা কবিতার ভাব প্রকাশ ও আঙ্গিকে যাঁরা পরিবর্তন এনেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি তিনি। শুধু গ্রামীণ কবি ছিলেন না। কাহিনী কাব্য, ছন্দ ও গীতিময়তায় তিনি বাংলা কাব্যের নয়াদিগন্ত উন্মোচন করেন। তাঁকে বাদ দিয়ে আধুনিক কবিতার কথা চিন্তা করা যায় না।
তবে প্রশ্ন ওঠে, তিরিশ কিংবা তিরিশোত্তর কবিরা যে অর্থে আধুনিক, ছিলেন, জসীম উদ্দীন কি সে অর্থে আধুনিক? এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। কেননা বুদ্ধদেব বসু ও আহসান হাবীব যে অর্থে আধুনিক, বিষ্ণু দে ও শামসুর রাহমান সে অর্থে আধুনিক নন। আবার জীবনানন্দ দাশ ও অমিয় চক্রবর্তী যে অর্থে আধুনিক, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কিংবা প্রেমেন্দ্র মিত্র কিংবা সমর সেন সে অর্থে আধুনিক নন। বস্তুত আধুনিক শব্দটি জবষধঃরাব বা আপেক্ষিক। আধুনিকতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উক্তি—‘আধুনিকতা সময় নিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে।’ আবার জীবনানন্দ দাশ মনে করেন, ‘বাংলা কাব্যে কিংবা কোনো দেশের বিশিষ্ট কাব্যে আধুনিকতা শুধু আজকের কবিতায় আছে—অন্যত্র নয়, একথা ঠিক নয়।’ আবার কেউ বলেন, ‘কালের দিক থেকে মহাযুদ্ধ-পরবর্তী এবং ভাবের দিক থেকে রবীন্দ্র-প্রভাবমুক্ত অন্তত মুক্তিপিয়াসী কাব্যকেই আমরা আধুনিক কাব্য বলে গণ্য করেছি।’ সুতরাং এসব অভিধায়ও জসীম উদ্দীন আধুনিক কবি।
তাঁর প্রকৃত পরিচয়—তিনি পল্লীবোধ ও পল্লী ইমেজের কবি। এর কারণও এই যে, প্রকৃতি উত্সারিত স্বাভাবিক ও মৌলিক লোকজ ধারাটি তাঁর আগে আর কেউ তেমন সহজভাবে আধুনিক কাব্যধারার সঙ্গে এক করতে সক্ষম হননি। এটি জসীম উদ্দীনের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল এজন্য যে, তিনি ছিলেন গ্রাম ও গ্রামবাংলার এক স্বাভাবিক অংশ। আর সেজন্যই তাঁর কবিতায় পল্লী প্রকৃতি, লোক জীবন ও লোক ঐতিহ্য অপূর্ব রূপলাভ করেছে।
জসীম উদ্দীনের কাব্যে পল্লী প্রকৃতি যেভাবে উপমা-উেপ্রক্ষা, রূপক ও চিত্রকল্প তথা আধুনিক কবিতার লক্ষণযোগে ধরা দিয়েছে—সমগ্র বাংলা কাব্যে এর দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। দু’তিনটি নজির এখানে খাড়া করি।
যেমন :
এই গাঁয়ের এক রাখাল ছেলে লম্বা মাথার চুল
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচাধানের পাতার মতো কচি মুখের মায়া
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দু’খান সরু
গা-খানি তার শাওন মাসের যেমন তমালতরু।
[নকশী কাঁথার মাঠ]
কিংবা
দূর্বাচলে রাখলে তারে দূর্বাতে যায় মিশে,
মেঘের খাটে শুইয়ে দিলে খুঁজে না পাই দিশে।
বনের মাঝে বনের লতা পাতায় পাতায় ফুল
সেও জানেনা-নমু মেয়ের শ্যামল শোভার তুল।
[সোজন বাদিয়ার ঘাট]
এবং এভাবেই রূপকে-প্রতীকে-চিত্রকল্পে এবং উপমা-উেপ্রক্ষায় সমস্ত পল্লী প্রকৃতির ভেতরে ছড়ানো আছে জসীম উদ্দীনের কবিতার সাম্রাজ্য। মূলত সব দিক বিবেচনায় সহজেই বলা যায়, তিনি আধুনিক যুগের কবি।
Thanks for such an informative post, it's been very useful for me. bdcircularjob.com
ReplyDeleteBRAC NGO ব্যাংক এনজিও তে আবেদন করার নিয়ম সিভি । ব্যাংক এনজিওতে চাকুরী করা সমস্ত মানুষের কাছে একটি বড় সুযোগ। কারণ, সর্বাধিক লোকেরা একটি ভাল কাজ পছন্দ করতে চায়। এক্ষেত্রে এই চাকরির বিজ্ঞপ্তিটির নিয়ম কানুন মানুষের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ বেকার। এই কাজটি তাদের কাছে খুব প্রয়োজনীয়। এটি একটি দুর্দান্ত সম্মানের কাজ। এটি আমাদের দেশের মানুষের জন্য একটি স্বপ্নের কাজ, তাই ব্যাংক এনজিওতে কিভাবে আবেদন করতে হবে তা নিয়ম কানুন দেওয়া আছে। www.brac.net https://www.ajkernotice.com/
ReplyDeletehttps://bd-newstoday24.blogspot.com/2020/09/bangladesh-army-job-circularbd.html
ReplyDeleteGood Information
Thanks for such an informative post. I like your Work
ReplyDeleteI have a lot of respect for a writer that can take informational content and make it interesting. You did this. Readers like to be entertained when reading straight information. fire service job circular
ReplyDeletehttps://bookkothabd.blogspot.com/
ReplyDeleteBest Online Casinos UK | The Best Online Casino Sites [2021]
ReplyDeleteBest Online Casino UK | The Best Online Casino 바카라 Sites [2021] - Welcome to CasinoWow. We have over 100 casino games from the 1xbet best 인카지노
This is a great inspiring article. You put really very helpful information. Keep it up. Keep blogging. Looking to reading your next post. one line poetry in urdu
ReplyDeleteGreat Learning Coming From Tech Waping.
ReplyDelete