Thursday, March 28, 2019

নোবেল নিয়ে লবিং করা উচিত

– না জি ব ও য়া দু দ

পৃথিবীতে অনেক ধরনের পুরস্কার আছে। কিন্তু নোবেলের মতো এত মর্যাদাবান পুরস্কার আর নেই। যেকোনো বড় মানুষের মনে এই পুরস্কার পাওয়ার একটা প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা থাকেই থাকে, তা তারা প্রকাশ্যে স্বীকার করুন বা না-ই করুন। এরজন্য বছরের পর বছর ধরে প্রচার-প্রোপাগান্ডাও কম হয় না। মিডিয়া তো আছেই। যার যাকে পছন্দ তাকে তুলে ধরার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকে তাদের, বারবার তাদের নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলে অব্যাহতভাবে। সেসব দেখে-পড়ে সাধারণভাবে কারো সন্দেহ হবে না যে, এগুলো আসলে প্রচার-প্রেপাগান্ডা, তা এতটাই ছদ্মবেশী। এসব কারণে নোবেল পুরস্কার নিয়ে আগ্রহের যেমন শেষ নেই, সমালোচনাও কম নয়। যা-ই হোক, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর এলেই নোবেল পুরস্কার নিয়ে তোড়জোর বেড়ে যায়, ভেতরে ভেতরে শুরু হয় নানারকম লবিং-গ্রুপিং। আর অক্টোবর পড়লেই শুরু হয় প্রকাশ্য আলোচনা-পর্যালোচনা। কারণ, অক্টোবরের প্রথম দশকের মধ্যেই নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

নোবেলের জন্ম

ডিনামাইট আবিষ্কারক সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল (১৮০৫-৮৯) এই পুরস্কারের ব্যবস্থা করে যান। তার পেছনে একটা মর্মান্তিক ইতিহাস আছে। ডিনামাইট আবিষ্কার তাঁকে বিপুল বৈভবের মালিক বানায়। ১৮৮৮ সালে তাঁর ভাই লুদভিগ কান ভ্রমণের সময় মারা যান। সেসময় তাৎক্ষণিকভাবে রটে যায় যে, আলফ্রেড নোবেল মারা গেছেন। একটি ফরাসি কাগজে ‘মৃতু্যর বণিকের মৃতু্য’ শিরোনামে লেখা হয়, ‘ড. আলফ্রেড নোবেল, যিনি ধনী হয়েছেন আগের চেয়ে আরো দ্রুত বেশি বেশি মানুষ হত্যা করার হাতিয়ার বানিয়ে, তিনি গতকাল মারা গেছেন।’ এটা পড়ে নোবেল খুব দুঃখ পান, তিনি এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে, তাঁর সত্যিকারের মৃতু্যর পর লোকে তাঁকে এইভাবেই মূল্যায়ন করবে। এই ভাবনা তাঁকে তাঁর সম্পদ কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করতে উৎসাহ জোগায়। ১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি তাঁর সকল সম্পদ উইল করে দেন। এই উইল অনুযায়ী প্রথমে ফিজিক্যাল সায়েন্স, রসায়ন ও মেডিক্যাল সায়েন্স/ফিজিওলজি, এই তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার চালু করা হয়। পরবর্তীকালে সাহিত্য, অর্থনীতি ও শান্তি ক্যাটাগরিতেও পুরস্কার চালু করা হয়। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের চিন্তক ছিলেন এরিক লিন্ডবার্গ। ১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দিকে বহুকাল ধরে বিশেষ একটি বইয়ের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হতো। এখন অবশ্য লেখকের সামগ্রিক অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। ‘আর্থিক সংকট’ ও ‘যোগ্য লোকের অভাব’-এ ১৯১৪, ১৯১৮, ১৯৩৫, ১৯৪০, ১৯৪১, ১৯৪২ ও ১৯৪৩ সালে পুরস্কার দেওয়া হয়নি।

নোবেল নিয়ে বিতর্ক

নোবেল পুরস্কার নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। প্রথম থেকেই যে বিতর্কের শুরু সেটা হলো, আলফ্রেড নোবেল যে লক্ষ্যে পুরস্কার দিতে বলেছেন, তা মান্য করা হচ্ছে কি-না। এটি অবশ্য ধোপে টেকেনি, সে বিতর্ক এখন আর কেউ করে না। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, কিসের ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি নেই। হেনরিক ইবসেন, লিও টলস্টয়, ফ্রাঞ্জ কাফকা, জেমস জয়েস, নবোকভের মতো কালজয়ী সাহিত্যিকরা এই পুরস্কার পাননি। কেন পাননি, তার কোনো সন্তোষজনক জবাব নোবেল কমিটি দিতে পারেনি। অথচ এমন নোবেল লরিয়েটের সংখ্যা কম নয়, যাদের নাম বর্তমান বিশ্ব ভুলেই গেছে। সুতরাং অভিযোগ ওঠা অস্বাভাবিক নয়। সে কারণে এ বিতর্ক এখনো চলছে। ধারণা করা হয়, ইউরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ এ ক্ষেত্রে প্রায়শই প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। কারণ, দেখা গেছে নোবেল লরিয়েটদের অধিকাংশই ইউরোপ-আমেরিকার লোক। এর বাইরের যারা নোবেল পেয়েছেন, বেশিরভাগ আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার, তারাও কোনো-না-কোনোভাবে ইউরোপ-আমেরিকা সংশিস্নষ্ট। তারপরও, একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, সুইডিশ অ্যাকাডেমি একেবারে যাকে-তাকে কখনো এই পুরস্কার দেয়নি।

কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাবেন বলে অধিকাংশমহল যাদের নাম নিয়ে আলোচনা করেছে, বাস্তবে তারা তা পাননি। যেমন, গতবছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আমেরিকান কথাশিল্পী ফিলিপ রথ, সিরীয় কবি অ্যাডোনিস (আলী আহমদ সাঈদ), ইসরাইলি লেখক অ্যামোস ওজ, আমেরিকান কথাশিল্পী জয়েস ক্যারল ওয়েটস, ক্যানাডিয়ান কথাশিল্পী মার্গারেট অ্যাটউড ও এলিস মনরো, জাপানি কথাশিল্পী হারুকি মুরাকামি, কোরীয় কবি কো উন প্রমুখ। বিশ্ববিখ্যাত নাইজেরীয় লেখক চিনোয়া আচেবে, কেনীয় নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, ইতালীয় মিলান কুন্ডেরা, পেরুর মারিয়ো ভার্গাস য়োসা প্রমুখের নামও আলোচনায় ছিল। জার্মানির হারতা মুলারের নাম তেমন একটা আলোচিত হয়নি। কিন্তু দেখা গেল, তিনিই পুরস্কার পেলেন। এবছরও অনেকটা সেরকমই হয়েছে। এবছরও এসব নামই আলোচনার শীর্ষে ছিল। টপ ফেভারিট ছিলেন সুইডিশ কবি টমাস ট্রান্সট্রোমার। ভার্গাস য়োসার নাম আলেচিত হলেও তিনি ফেভারিটদের তালিকায় ছিলেন না। কিন্তু তিনিই পুরস্কার পেলেন। ভার্গাস য়োসার যোগ্যতা নিয়ে কেউ কথা তোলেননি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানও এর পেছনে কাজ করেছে কি-না। তিনি প্রথমজীবনে কমিউনিস্ট ছিলেন। কিন্তু পরে উদারনৈতিক গণতন্ত্রী এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির এতটাই সোচ্চার প্রবক্তা বনে গিয়েছিলেন যে, তিনি এমনকি ১৯৯০ সালে এই নীতি প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে নামেন; অবশ্য হেরে গিয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতি ছেড়েছেন। কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো এবং ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের কঠোর সমালোচক তিনি। প্রায় বৎসরাধিককাল ধরে তিনি আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বেড়াচ্ছেন; প্রশ্নটা উঠেছে এসব কারণেই।

এতদিন অভিযোগ করা হচ্ছিল, নোবেলকমিটি কিছুটা বামঘেঁষা হয়ে উঠেছে। বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে নিষ্ক্রিয়, বা বামপন্থার প্রতি কিছুটা বিরক্ত, এরকম লেখকদের গত কয়েকবছর ধরে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছিল। সে অভিযোগ হয়তো-বা ভার্গাস য়োসার ক্ষেত্রেও তোলা যায়, যদিও বাম রাজনীতিকে তিনি কেবল প্রত্যাখ্যানই করেননি; এর বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থানও নিয়েছেন।

আমেরিকানদের ক্ষোভ

নোবেল পুরস্কার নিয়ে আমেরিকানরা এবার বেশ উত্তেজিত এবং ক্ষুব্ধ। তাদের ধারণা, সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাদের ঠিক-ঠিক মূল্যায়ন করছে না। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর আর কোনো আমেরিকান লেখক নোবেল পুরস্কার পাননি। বলতে কি, ১৯৯৪ সালে জাপানি লেখক কেনজাবুরো ওয়ে এবং ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জে এম কোয়েটজি বাদে ইউরোপিয়ানরাই ১৬ বছরধরে নোবেল পুরস্কার পেয়ে আসছেন। সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার ক্ষেত্রে অতীতেও ইউরোপিয়ানদেরই প্রাধান্য ছিল। হিসাব নিয়ে দেখা যাচ্ছে, ১৯০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার চালু হওয়ার পর থেকে ইউরোপিয়ানরা এ পুরস্কার পেয়েছেন ৭৮ বার, আমেরিকানরা ১০ বার, ল্যাটিন আমেরিকানরা ৬ বার, আফ্রিকানরা ৪ বার, এশিয়ানরা ৩ বার এবং অস্ট্রেলিয়ানরা ১ বার। সম্প্রতি, এবারের নোবেল ঘোষণার কিছু আগে, সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব হোরেস এংদাল পরিষ্কার ভাষায় মার্কিনদের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সব ভাষাতেই ভালো সাহিত্য রচিত হচ্ছে, কিন্তু ইউরোপই এখনো সাহিত্যের রাজধানী; আমেরিকা নয়।’ এতে আমেরিকানরা আরো ক্ষেপেছে। তাদের কেউ কেউ তো এংদালের কাছে আমেরিকান লেখকদের বইয়ের তালিকা; এমনকি বাছাই-করা বই পাঠানোরও পরামর্শ দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন দ্য নিউ ইয়র্কারের সম্পাদক ডেভিড রেমনিক এবং ইউএস ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হ্যারল্ড অজেনব্রম। তাঁদের মতো আরো অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এবারও বোধ হয় আমেরিকান কেউ নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন না। হয়েছেও তা-ই। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো একটা ব্যাপার বোধ হয় ঘটেছে। ভার্গাস য়োসা পেরুর সন্তান, অর্থাৎ ল্যাটিন আমেরিকান; সে-ও একরকম আমেরিকানই বটে! তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমেরিকার বাসিন্দা; যদিও অস্থায়ী। অবশ্য এর অন্যদিকও আছে। ভার্গাস য়োসা লেখেন স্প্যানিশ ভাষায়, স্পেনের আইনানুগ নাগরিকও বটে। সে বিবেচনায় তাঁর গায়ে ইউরোপের গন্ধ লেগেই থাকছে।

বাঙালিদের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছে না

১৯১৩ সালে বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এ নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। যা-ই হোক, সেই থেকে বাঙালিরা নোবেল পুরস্কার নিয়ে কম হইচই করছে না। আজকাল খবর হিসেবে মিডিয়াতে নোবেলবিজয়ীর গুণকীর্তন তো হয়ই; বিশেষত খবরের কাগজগুলো তাদের সাপ্তাহিক সাহিত্যপাতা ভরে তোলে নোবেলবিজয়ীদের নানা ধরনের বিষয়-আশয় দিয়ে। এই ধারা থেমে থেমে চলে অন্তত পরবর্তী বছরের নোবেলবিজয়ীদের নাম ঘোষণা পর্যন্ত। কিন্তু কাউকে এ নিয়ে ভাবতে দেখা গেল না, রবীন্দ্রনাথের পর বাঙালিরা কেন সাহিত্যে নোবেল পাচ্ছেন না_এ নিয়ে লেখক-পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে এবং নিজের পাঠ-অভিজ্ঞতা থেকে আমার যেটা উপলব্ধি হয়েছে, সেটা হলো, বাংলাভাষার অনেক সাহিত্যিকেরই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা ছিল এবং আছে। কয়েকটা নাম উচ্চারণ করা যায় নির্ভয়ে, দ্বিধাহীন চিত্তে_কবিদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, জসীম উদ্দীন, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ; কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, অমিয়ভূষণ মজুমদার, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ প্রমুখ তাহলে পাননি কেন? সম্ভবত এর প্রধান কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলা বইয়ের অনুবাদের অভাব। বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ হয় না বললেই চলে। যা দু-একটা হয়, তার অনুবাদের মান বাজার-চলতিরও নিচে। তাছাড়া সে অনুবাদ প্রকাশিত হয় সাধারণত দেশেই; ইউরোপ-আমেরিকাতে নয়। আন্তর্জাতিক সাহিত্যাঙ্গনে বাংলাভাষার সাহিত্যিকদের কি ব্যক্তিগত পর্যায়ে, কি সাংগঠনিক পর্যায়ে যোগাযোগও অত্যন্ত ক্ষীণ। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কথা না বলাই ভালো। আরেকটি কথাও স্বীকার না-করা উচিত হবে না বলে মনে করি। সেটা হলো, আমাদের সাহিত্যের বিষয়, আঙ্গিক ও জীবনবোধ পশ্চিম থেকে ধার করা। সেটা তাদের কাছে অনুকরণ এবং চর্বিতচর্বন বলে গণ্য হয়। আফ্রিকান ও ল্যাটিন আমেরিকানরা পশ্চিমের আঙ্গিক গ্রহণ করলেও বিষয় ও জীবনবোধের নিজস্বতা নির্মাণ করেছে। সে কারণে সেটা পশ্চিমের কাছে নতুন হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। তাদের আরেকটা সুবিধা হলো, তারা লেখেন মূলত ইউরোপ-আমেরিকার কোনো ভাষায়, বিশেষত স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিতে। সে কারণে তারা সরাসরি পাশ্চাত্যের বাজারে ঢুকতে পারেন। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকান লেখকদের একটা বড় অংশ মূলত, বিভিন্ন সূত্রে, ইউরোপ-আমেরিকারই বাসিন্দা; সেটাও তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। বাংলাসাহিত্যের প্রধান লেখকরা এই সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত। ইউরোপ-আমেরিকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিও এজন্য কম দায়ী নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও একথা সবাই জানে যে, নোবেল পুরস্কারের পেছনে সূক্ষ্ম রাজনীতি সবসময়ই ক্রিয়াশীল। নানা কারণে বাংলাভাষীরা ইউরোপ-আমেরিকার এই রাজনীতির কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে, বাংলাসাহিত্যের লেখকরা তাদের আগ্রহ বা সুদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত। সুতরাং, মনে হয়, বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের জন্য আপাতত কিছুকাল নোবেল পুরস্কার শিকেয় তোলাই থাকছে।

নোবেল নিয়ে লবিং করা উচিত

এইভাবে বললে কথাটা খারাপ শোনায়। বাস্তবে আমি বলতে চাচ্ছি, নোবেল পাওয়াটাই একমাত্র ব্যাপার নয়; আমাদের এমন সব প্রচেষ্টা নেয়া উচিত, যাতে আমাদের সাহিত্য বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ে, আলোচিত হয়। এজন্য নোবেল লরিয়েটসহ বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনের বড় ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ দেশে নিয়ে এসে আমাদের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ তৈরি করা দরকার। ভালো অনুবাদকদের দিয়ে আমাদের বাছাই-করা ভালো ভালো বইয়ের অনুবাদ করিয়ে নেওয়া এবং সেসব বই আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেসব অনূদিত বই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় লেখক ও সমালোচকদের কাছে পাঠাতে হবে। তাঁদের দিয়ে বইগুলোর ওপর আলোচনা লিখিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অর্থ। প্রতিবছর খেলাধুলার পেছনে যে পরিমাণ সরকারি-বেসরকারি অর্থ ব্যয় করা হয়, তার চারভাগের একভাগ এই কাজে বরাদ্দ করলেই যথেষ্ট। এভাবে এক-দেড় দশকের মধ্যেই বাংলাসাহিত্য ও সাহিত্যিকদের বিশ্ববাজারে অন্তভর্ুক্ত করানো সম্ভব বলে মনে করি; চাই কেবল উদ্যোগ। প্রথম উদ্যোগ সরকারের দিক থেকে প্রত্যাশা করাই সঙ্গত হবে।

7 comments: