Friday, January 4, 2019

হেমন্তের দীর্ঘ কবিতা || জাহাঙ্গীর ফিরোজ


হেমন্তের দীর্ঘ কবিতা || 
- জাহাঙ্গীর ফিরোজ

আজ ভোরে যখন দু’চোখে আসিয়া লাগিল
সূর্যালোক
দেখিলাম চতুর্দিকে কেমন যেন শুধু কুয়াশা ভেজা আলো আলো আলো
বুঝিলাম
হেমন্ত চারদিকে
হেমন্ত এসেছে আমাদের ছায়ায়
চারিদিকে কুয়াশার মতো আলো ছায়ার মতো অন্ধকারের শরীর


আমাদের এই শহরে কি হেমন্ত আসে?
কুয়াশারা হালকা চাদরের মতো
ছড়িয়ে পড়ে জানালার খোলা বাতাসে
ভেজা ভেজা চৌকাঠে কার্নিশে
মাকড়সার ধূসর এলোমেলো জালে
শিশিরের কণাগুলো সব আন্দোলিত হতে থাকে
শূন্যতায়


হঠাৎ দেখিলাম
আমাদের গলিটার বিষণ্ন শরীরে
কার সাঝি থেকে যেন ঝরিয়া পড়েছে
অসংখ্য ফুল আর পাতার সংলাপ
চেয়ে দেখি দেয়ালের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে একা শেফালিকা।


শরৎ চলিয়া গেছে ভাবিলাম আশ্বিনেরা কেন চলে যায়
কেন আলোঝলোমল দিনগুলো সব
নিয়ে আসে গহন গভীর সব কার্তিকের সন্ধ্যা
আনে ক্রমাগত হেমন্তের ছায়া
কেন হেমন্ত বিছিয়ে দেয় পথে পথে ঝরাফুলদল


হঠাৎ এসব কথা মনে হলো
দেখিলাম আরো দুটি ফুল ঝরিল তাহার অঞ্চল থেকে পথে
ঘরে ফিরে পত্রিকার পাতা খুলে দেখিলাম হায়! কার্তিক গিয়েছে চলে
হেমন্ত চলিয়া যাবে এই ভেবে ফিরিলাম গ্রামের বাতাসে
দেখিলাম খালের ওপারে এখনও রয়েছে বাঁধা ধর্মজাল
শীর্ণকায় জলস্রোত, ওপরে স্থির উড়িতেছে মাছরাঙা পাখি
আমার শৈশব ওই ধর্মজালে ঝুলে থাকা মাছেদের মতো
বেরিয়ে আসতে চাইছে বিস্মৃতির শূন্যতা থেকে
ঠিক তখনি বিকেলের পড়ন্ত রোদে স্থির মাছরাঙাটির মতো
ঝুপ করে নেমে এলো অঘ্রাণ
জলের নিস্তব্ধতা ভেঙে ঠোঁটে তুলে নিলো আমার শৈশব

সহসা প্রান্তরে দেখিলাম শন আর সরিষার ক্ষেতে হলুদ পতাকা
তারপর ক্রমাগত মাইল মাইল ঘন সবুজের বুকে লাল ফুল
ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে

মাঠে জ্বলিতেছে নাড়া
স্থির ধূঁয়ার কুণ্ডলি মন্থর বাতাসে
দিগন্তের দিকে উড়ে যেতে যেতে সন্ধ্যাকে ডেকে আনিতেছে
মনে হলো হেমন্তের পাখিরা সব ধীরে চলে যাচ্ছে

চারিদিকে শীতের পাখিরা
গাছে গাছে পাতা ঝরার শব্দ।


|| 2 ||

মরাকার্তিক বলে কে তোমাকে ডেকেছিল কবে
জানা নেই তবু শৈশবে ওলা ওঠা রোগে গ্রাম উজারের স্মৃতি
এখনো ধূসর সন্ধ্যায় উঁকি দেয়।
বিংশ শতকেই শেষ হয়ে গেছে আমার শৈশব;
তখন কার্তিকে পুঁটিমাছ, খলসে আর ডানকানা
কাদায় মাখামাখি কৈশোরিক রোদ;
বোধ হয় অঘ্রাণে- যার ডাক নাম আগুন
সেই আগুনে চামারাধান কাটা হলে
নাড়ার গোপন থেকে খেসারি ও মাষ
মাথা তুলে রাই সরিষারা হলুদ ছড়ালে
উত্তর থেকে শীত বাতাস বহিত;
সেই হাওয়া আজও বয়ে যায়?
শৈশব-কৈশোর ফেলে বহুদূর চলে এসে
ঋতুর বৈভব ভুলে নগরীর জঞ্জালে ডুবে আছি; তবু
হেমন্ত আসিয়া টোকা দিলে খুলে যায় স্মৃতির জানালা
চোখে ভাসে মাইল মাইল ঘন খেসারি ও শনের হলুদ।
হেমন্ত রহিবে এই উচ্ছ্বাসে
কয়েক পঙ্ক্তি লিখে শৈশবে ডুবে যাই;
শনের হলুদ আর সরিষার কার্পেট দূরে বাঁশঝাড়
ট্রেনের জানালায় ঘুরে ঘুরে সুদূরে হারালে
কাণিবক পগারের পারে স্থিরজলে চোখ রাখে তপস্যায় বসে;
এইসব দৃশ্যের ফাঁকে ধর্ম আর খরাজাল
তেলতেলে মাছরাঙা, কুয়াশার মিহিন আঁচলে গ্রাম ঢেকে যায়
ট্রেন চলে, হলুদ কার্পেটে স্মৃতির মৌমাছি খেলা করে হৈমন্তিক বিকেলে।

No comments:

Post a Comment